মো. আবদুল মুনাফ পিন্টু :
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার কুঠির হাটের টমটম চালক নুর আলম হত্যা মামলার চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
বগাদানা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের দরিদ্র টমটম চালক নুর আলমকে গত ১৯ জুন বুধবার গলাকেটে হত্যার পর তার পিতা নুর নবী বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের নামে সোনাগাজী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ চরমজলিশপুর ইউপির বদরপুর গ্রামের জয়নাল আবদিনের ছেলে মো: মিনহাজকে গ্রেফতার করেন।
সোনাগাজী মডেল থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন মামলাটি তদন্তের দায়ীত্ব পান । তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি মিডিয়াকে জানান, থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর মিনহাজ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
এহত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর দুই ঘাতক বগাদানা ইউপির পাইকপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাসান ও কামাল উদ্দিনের ছেলে শাকিবের নাম প্রকাশ করে। এরপর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও হাসান ও শাকিবকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পরে মিনহাজ আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদানে রাজি হয়।
তিনি আরো জানান, রবিবার(২৩জুন) বিকালে ধৃত আসামী মিনহাজ ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ফৌজধারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডের আদ্যেপান্ত বর্ননা করেন।
জবানবন্দির বর্ননায় জানা যায়, ঢাকার একটি মেয়ের সাথে বগাদানা ইউপির হাসানের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। গত কিছদিন পূর্বে মেয়েটিকে তার পরিবার বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে মেয়েটি তার প্রেমিক হাসানের কাছে ফেনীতে চলে আসে।হাসান ফেনী শহরে বাসা ভাড়া করে মেয়েটিকে রাখে।
বিয়ের খরচ ও বাসা ভাড়া কিভাবে সংগ্রহ করা যায় এ বিষয়ে হাসান তার দুই বন্ধু মিনহাজ ও শাকিবের সাথে পরামর্শ করেন।
টমটম চালক নুর আলমকে হত্যার কয়েক দিন আগে তারা ফেনী শহরের একটি বাসায় বৈঠকে বসে চুরি ডাকাতি ছিনতাই সহ যে কোন ধরনের অপরাধ করে টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এরপর এলাকায় গিয়ে গত ১৯ জুন বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার সময় হাসান ও শাকিব মজলিশপুর ইউপির কুঠিরহাট বাজারে অবস্থান করে। এসময় টমটম চালক নুর আলম খালি টমটম নিয়ে কুটিরহাট ব্রীজের কাছে অবস্থান করছে দেখে হাসান ও শাকিব কৌশলে টমটমটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ১৫০ টাকা ভাড়ায় টমটম রিজার্ব করে। তাদের কে নিয়ে চালক নুর আলম রওয়ানা হয়ে চরবদরপুর গ্রামে পৌঁছলে পথিমধ্যে ঘাতক মিনহাজ টমটমে উঠে।
এরপর চালক নুর আলম টমটম চালিয়ে মিয়াজিঘাট পেরিয়ে ৪/৫ শত গজ দুরে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হাসান তার কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে পিছন দিক থেকে চালক নুর আলমের গলায় পোচ মারে। এসময় বাঁচার জন্য নুর আলম চিৎকার শুরু করে। একপর্যায়ে হাসান মিনহাজ,শাকিব টমটমটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নুর আলমের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসা শুরু করলে টমটমটি না নিয়ে তার পকেটে থাকা টাকা ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।