ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। আদালত মামলাটি বিচারের জন্য ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করেছেন। আগামী ৯ জুলাই ওই আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিবেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালত শুনানি শেষে এই সিদ্ধান্ত দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মো. শাহ আলম ও বাদীর আইনজীবী এডভোকেট শাহ জাহান সাজু এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ফেনী কারাগার থেকে এই মামলার চার্জশিটভুক্ত একমাত্র আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আদালতে হাজির করা হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলাটি করার পর নুসরাত ফেনীর বিচারিক হাকিম আদালতে ঘটনার জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেই জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ২৭ মার্চ বেলা পৌনে ১১টার দিকে মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে ডেকে পাঠানো এদুকেহয়। রাফির সঙ্গে তার দুই বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ও নিশাত সুলতানাও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে যায়। এসময় অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাতের দুই বান্ধবীকে ভেতরে ঢুকতে দেননি। নুসরাত একাই অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকেন। এসময় নুসরাতের গায়ে হাত দেওয়াসহ তাকে যৌন হয়রানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ। এক পর্যায়ে নুসরাত কাঁদতে কাঁদতে অধ্যক্ষের রুম থেকে বের হয়ে শ্রেণি কক্ষে যান।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, এ মামলায় দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার যোগসূত্র থাকার কারণে সাক্ষী নুসরাতের দুই বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ও নিশাত সুলতানা, মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিন ও নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হবে। এছাড়াও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিনের ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দি, মৃত্যুর আগে নুসরাতের দেওয়া জবানবন্দিসহ কিছু তথ্যও ব্যবহার করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, যৌন হয়রানি’র অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি মা সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই দিনই মাদরাসার অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদেরকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে শ্লীলতাহনির করে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এঘটনায় নুসরাত রাফির মা বাদি হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পিবিআই ৫ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করলে আদালত তা অনুমোদন করে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মেলায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাত রাফির জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ায় সাইবার আইনের মামলায় গ্রেফতার সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেন কারাগারে রয়েছেন।