ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনীর দাগনভূঞা আতাতুর্ক সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক আহম্মেদ অয়নকে, পিটিয়ে আহত করেছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোবারক হোসেন। গত (১৮ জুলাই) বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে এঘটনা ঘটে। আহত ছাত্র অয়নের ক্লাস রোল নং ২৪৭। ভূক্তভোগী ছাত্রের পিতা মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, ওই দিন সকালে অয়ন বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক তাঁকে শার্ট ইন না করায়, বেধড়ক বেত্রাঘাত করে। পরে অয়ন শ্রেণিকক্ষে গেলে সে বমি করতে শুরু করলে, অয়নের শ্রেণি শিক্ষক ভাস্কর তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। এরপর সে বাসায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে তাকে দাগনভূঞা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন কতব্যরর্ত ডাক্তার তাকে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। অয়নকে ভর্তি না করিয়ে তার পিতা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে আসেন। পরের দিন শুক্রবার (১৯জুলাই) অয়নের অবস্থার অবনতি দেখে হাসাপাতালে ভর্তি করায় তার পিতা। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেনর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ইউনিফর্ম গায়ে না দিয়ে আসায় আমি ১৫/২০ জন ছাত্রকে হাল্কাভাবে বেত্রাঘাত করেছি, এতে কেউ এমন গুরুত্বর আহত হয়নি। এখন শুনতেছি ইসতিয়াক আহম্মেদ অয়ন নামে শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষক দাবি করেন ছাত্র অয়ন ওইদিন ৬ ঘন্টা ক্লাস ও করেছিল, এরপর সে অজ্ঞান হয় কিভাবে তিনি তা জানেন না।
এদিকে প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তিনি বিদ্যালয়ের বহুতল বিশিষ্ট মার্কেটের টাকা লুটপাট, ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তি বাণিজ্য, বছরের শুরুতে সেশন ফি নামে ১১শত টাকা না দিলে ছাত্র-ছাত্রীদের বই দেন না। তিনি বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় হাঁস-মুরগি খামার নির্মাণ করে পরিবেশ নষ্ট করতেছে। এর কিছুদিন পূর্বে তার মুরগি চুরির নামে ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করেন। অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচারণ সহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে বিদ্যালয় সরকারিকরণ ঘোষণার প্রস্তাব আসলে তিনি মাকেন্টাইল ব্যাংক দাগনভূঞা শাখা থেকে ৯০ লক্ষ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক দাগনভূঞা শাখা থেকে ১কোটি ৪০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন। তিনি শহিদ মিনার ভেঙ্গে মার্কেট নির্মাণ করে, সেখানে দুইটি কক্ষ বরাদ্দ করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বিক্রয় করে পেলে। তিনি বিদ্যালয় থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক অভিভাবক জানান, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের শিক্ষারমান দিন দিন অবনতি হচ্ছে। মো. মোবারক হোসেন প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও সুনাম নষ্ট হয়েছে।
এদিকে দাগনভূঞা সদর হাসপাতালের আরএমও মো. সাইফুল বলেন, ছাত্র অয়ন জ্বর ও বমি নিয়ে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে এখনও আতংক বিরাজ করছে। দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞা বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন ও লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। উক্ত বিষয় খতিয়ে দেখতে। তিনি আরো বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে বেত ব্যবহার না করে, তার জন্য কঠোর নিদের্শনা দিয়েছেন।