উপসম্পাদকীয়:
ইসলামের ছাদ্মনামধারী বাতিল এজিদবাদী কুফরি শিয়া ও খারেজী ওহাবী সম্প্রদায় দ্বীন মিল্লাত মানবতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত। ঈমানী দিবস ও কর্মসূচির শিক্ষা চেতনা ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভুলিয়ে দেয়া ও ধ্বংসের জন্য বহু ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত এরা। তারই অংশ হিসেবে এরা ঈমান-কুফর, হক-বাতিল, খেলাফত – মুলুকিয়তের পার্থক্যকারী মিল্লাতের জাতীয় শহীদ দিবসকে ভুলিয়ে দিয়েছে খুব কৌশলে আশুরা শব্দ দিয়ে।
আশুরা শব্দের আড়ালে আসলে একদিকে এই দিনটিকে শিয়াবাদী অপরেদিকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করে মূল শিক্ষা চেতনা নস্যাৎ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় খারেজী ও অন্যান্য বাতিল সম্প্রদায়। তাছাড়া ১০ই মহররম আসলেই পত্র পত্রিকায় মিডিয়ায় এমন কি সুন্নী নামধারী অনেকেই এই দিনটিকে “আশুরা” বলে প্রচার করে অথবা আশুরা নামে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু যদি একটু চিন্তা করি দেখব আরবী আশারা থেকে আশুরা নেওয়া যার অর্থ দশ তারিখ যা প্রত্যেকটি আরবি মাসেই আছে। তাহলে ১০ই মহররমকে শুধু আশুরা বলার কারণ কি ?
এর পিছনে অনেক কারণ আছে। মূলত ১০ই মহররম শাহাদাতে কারবালার প্রকৃত শিক্ষা চেতনাকে আড়াল ও নস্যাৎ করার জন্যই মুসলিম মিল্লাত ও সমগ্র মানবতার শহীদ দিবসকে আশুরা নামে চালিয়ে দেয়া হয়। ১০ই মহররমকে আশুরা শব্দ দিয়ে সম্বোধন করলে না পাওয়া যায় শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা চেতনা, না পাওয়া যায় কোন ঈমানী দিশা বরং কারবালার শাহাদাতের শিক্ষা চেতনা লক্ষ্য উদ্দেশ্য আড়াল হয় এবং বিপরীত কিছু প্রতিষ্ঠা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে ১০ই মহররম অনেকগুলো কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে ও ঘটবে এই দিনে যা অনেকেই জানেন বা বর্ণনা করে থাকেন এই দিনে। কিন্তু ঐ ঘটনাগুলোর সাথে ঈমান কুফর, হক-বাতিল, খেলাফত- মুলুকিয়তের কোন শিক্ষা চেতনার কোন সম্বন্ধ বা সংযোগ নেই। ১০ই মহররমে নানা ঘটনা প্রবাহ থাকলেও শাহাদাতে কারবালা দিবসের পূর্বের সব ঘটনা স্মৃতি সবকিছুকে ম্লান করে দেয় যে ঘটনা তা হলো কারবালা প্রান্তরে সত্য ও মানবতা রক্ষায় প্রাণপ্রিয় ইমামে আকবর রাদিআল্লাহু আনহু ও আহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় শাহাদাত যার সাথে কলেমা ঈমান দ্বীন সবকিছু সরাসরি জড়িত ও অস্তিত্ব রক্ষার সমস্তকিছু নিহিত। এই কারণে ৬১ হিজরির পূর্বের যে ১০ই মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আর ৬১ হিজরির পরের ১০ই মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কোনভাবেই এক নয় বরং পরের ১০ই মহররমই আমাদের সবার জন্য কলেমা দ্বীনকে বুঝার প্রত্যক্ষ দিশা ও চেতনা।
১০ই মহররমে কারবালার প্রান্তরে ইমামে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় কোরবানি শাহাদাত সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য যা ব্যতীত মিল্লাতকে কল্পনা করা যায়না যেহেতু মুসলিম জাতির আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক সবদিক থেকে পূর্ণাংগ শিক্ষা চেতনা ও দিশা ও অস্তিত্বের স্মারক এই শাহাদাতের সাথে জড়িত। কারবালার প্রান্তরে ঈমান দ্বীন মানবতা তথা কলেমাকে সমুন্নত রাখার জন্য প্রাণপ্রিয় ইমামে আকবর রাদিআল্লাহু আনহু ও মহান আহলে রাসুল সাসল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদের সর্বোচ্চ কুরবানি তথা শাহাদাত সৃষ্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও অতুলনীয় অদ্বিতীয়।
এই শাহাদাতের সাথে পৃথিবীর আর কোন শাহাদাতের তুলনা হয় না,কারণ
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে আদি অন্তের সকল শহীদানের ত্যাগ ও শাহাদাতের শিক্ষা এবং কেয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য ঈমানের আলো ও মানবতার মুক্তির দিশা।
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম জাতির পূর্ণাঙ্গ দিশা দিকদর্শন ও জাতীয় জীবন চেতনা কেমন হবে তার পূর্ণাংগ রুপরেখা।
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম জাতির গৌরবময় ইতিহাস।
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে বদর ওহোদের মাধ্যমে অর্জিত সকল কিছুকে সমুন্নত রাখার সুমহান শিক্ষা।
*এই শাহাদাতের কারণে আজ হক বাতেল কেয়ামত পর্যন্ত চির পৃথক।
*এই শাহাদাতের কারণে সত্য তার আপন মহিমায় চির উজ্জ্বল,
*এই শাহাদাতের কারণেই একজন মুমিনের আত্মা জীবন ক্রয়-বিক্রয়ের উর্দ্ধে।
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িত আছে আল্লাহ-রাসুলের প্রেম ও আল্লাহ- রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ উৎসর্গতা ও আত্মত্যাগের অসীম শিক্ষা চেতনা।
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে জীবনের বিনিময়ে হলেও বাতেলের বিরুদ্ধে প্রাণপণে রুখে দাঁড়ানো এবং জীবন ও রাষ্ট্রকে জুলুম শোষণ অবিচারের ধারকদের হাতে তুলে না দেওয়ার অসীম সাহস শিক্ষা ও ঈমানি রুদ্র চেতনা।
*এই শাহাদাতের সাথে জড়িয়ে আছে খেলাফতেরই পূনর্জীবনের দিশা।
এক কথায় কলেমাভিত্তিক জীবন চেতনার পূর্ণাঙ্গ দিশা ১০ই মহররম শাহাদাতে কারবালা দিবস যাকে মুসলিম মিল্লাতের মহান ইমাম আল্লামা ইমাম হায়াত আলাইহি রাহমা সমগ্র মুসলিম মিল্লাত ও মানবিতার জন্য জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
যে শাহাদাতের মধ্যে মুসলিম মিল্লাতের সকল শিক্ষা চেতনা ও কলেমার প্রকৃত মর্ম নিহিত, অথচ সেই শাহাদাতে কারবালাকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য কতিপয় মুসলিম ছদ্মবেশধারীরা ১০ই মহররমকে আশুরা নামে অভিহিত করে কারবালার শিক্ষাকে আড়াল করছে অত্যন্ত সুকৌশলে।
কারবালার শিক্ষা ভুলে যাওয়া মানে কলেমার প্রকৃত শিক্ষাই ভুলে যাওয়া অর্থাৎ অন্ধকারে পতিত হওয়া। কারবালার শাহাদাতের প্রকৃত মর্ম বুঝতে না দিয়ে নিজেদের মনগড়া কুফরি মতবাদ ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে অন্ধকার ও কুফরিতে ডুবিয়ে রাখার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে কারবালার শিক্ষা চেতনার বিপরীত বিভিন্ন অপশক্তি।
তাই এই সকল অপশক্তির ঘৃণ্য প্রতারণা উৎখাত করতে ও এই দিবসের প্রকৃত শিক্ষা, তাৎপর্য, দিশা-দিকদর্শন তুলে ধরতে, সত্য মানবতা প্রতিষ্ঠা করতে ১০ই মহররমকে আশুরা নয় মুসলিম জাতির জাতীয় শহিদ হিসেবে পালন করতে হবে। একমাত্র শহিদ দিবস হিসেবে পালন করলেই এই দিবসের প্রকৃত শিক্ষা, দিশা-দিকদর্শন পাওয়া ও তুলে ধরা সম্ভব এবং জাতির মুক্তি সম্ভব অন্যথায় জাতির পক্ষে এই দিবস থেকে শাহাদাতের আলোক রশ্মি পাওয়া সম্ভব নয়।
বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন মূলত এই সময়ে কারবালার সেই শিক্ষা চেতনা ও আলোক ধারার সংগঠন। তাই বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১০ই মহররমকে মুসলিম মিল্লাত ও সমগ্র মানবমন্ডলীর জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে মিল্লাত মানবতার হারানো সবকিছুকে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য খেলাফতে ইনসানিয়াত তথা মুসলিম অমুসলিম সব মানুষের কল্যাণের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্র ও দুনিয়া গড়ে তুলুন।
মুসলিম জাতি ও সমগ্র মানবতার জাতীয় শহিদ দিবস ১০ই মহররম শাহাদাতে কারবালা দিবস।
লেখক —- অধ্যাপক মোকারম হোসেন