সোনাগাজী প্রতিনিধি:
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামী মাদ্রাসা শিক্ষক আফসার উদ্দিনের মৃত্যুদন্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী, ছাত্র ছাত্রী ও পরিবারের সদস্যবৃন্দ। বৃহস্পতিবার সকালে সোনাগাজী পৌর শহরের পশ্চিম বাজারে নুসরাতের কবর সংলগ্ন স্থানে মানবন্ধনে স্থানীয় এলাকাবাসী, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও আফসারের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহন করেন। মানবন্ধনের ব্যানারে তারা রায়কে ফরমায়েশী রায় উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে সঠিক ও ন্যায় বিচার কামনা করেন।
আফসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া হোসেন ইফাত কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, নুসরাতের পরিবার ন্যায় বিচার পেলে আমরা কেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবো। নুসরাত হত্যার বিচার আমরাও চাই কিন্তু আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে কোন সাক্ষী প্রমান ছাড়াই আদালত মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। গত ৬ এপ্রিল আমার স্বামী কলেজ রোড়ে ছাত্র ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর সময় নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হয়। কলেজ রোড়,জিরো পয়েন্ট, মাদ্রাসা এলাকা সহ পুরো পৌর শহর সোনাগাজী মডেল থানা ও পৌরসভার সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিলো। ঘটনার পরে গত ১০ এপ্রিল পিবিআই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে যায়। মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে আমাদের আইনজীবি ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ তলবের জন্য আবেদন করলেও সেটা পাওয়া যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমার নির্দোষ স্বামীকে ফাঁসিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ হাজির করা হোক। যদি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় আমার স্বামী মাদ্রাসা গেটে পাহারায় ছিলো তবে যে কোন দন্ড আমরা মাাথা পেতে নিবো। আদালতে ৮৭ জন সাক্ষীর কেউ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। নুসরাতের পরিবারে যারা সাক্ষী দিয়েছে তারাও কোন সাক্ষ্য দেয়নি।
বাদী নোমান আদালতে বলেছে আমার স্বামীকে ভূল করে আসামী করা হয়েছে। নুসরাতের অডিও ভিডিও জবানবন্দিতে আমার স্বামীর নাম বলেনি। তারপরও আদালত আমার স্বামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। আমরা এ রায় মানিনা। প্রধানমন্ত্রী সবার অভিভাবক। আমি মমমতাময়ী মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি। উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার না পেলে আমার অবুঝ দুটো সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।
মানবন্ধনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সানজিদা,সাদিয়া হোসেন,সুমাইয়া আক্তার,সাদিয়া জাহান রোজা,আমজাদ হোসেন সুমন,শাহাদাত হোসেন জুয়েল,হাসান ও নাহিদ বলেন, গত ৬ এপ্রিল নুসরাত যখন অগ্নিদগ্ধ হয় তখন আফসার স্যার কলেজ রোড়ে আমাদের প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। ওই সময় আমরা খবরটি জানতে পারলে স্যার আমাদের ছুটি দিয়ে বাসায় চলে যান। থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার প্রমান মিলবে। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে আমাদের স্যারকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় স্যার আমাদের সামনে ছিলেন তিনি ওই সময় গেইট পাহারা দেয় কিভাবে? আমরা আমাদের নির্দোষ স্যারের মুক্তি চাই। এতদিন প্রশাসনের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস করিনি। এখন নির্দোষ ব্যাক্তির মৃত্যুদন্ড হওয়াতে আমারা মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি। সোনাগাজী সরকারী ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে আফসার কে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। নুসরাত যে গ্রামের মেয়ে আমরাও সে গ্রামের বাসিন্দা।
আজকে গ্রামের বহু মানুষ উপস্থিত আছে। আফসার নির্দোষ বলে কেউ তার মৃত্যুদন্ড মেনে নিতে পারেনি।আমরা চাই নুসরাত হত্যার সঠিক বিচার হোক। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে গোপনে তদন্ত করা হোক। তাহলে আফসার যে নির্দোষ সেটা প্রমানিত হবে।
আফসারের মা বৃদ্ধা নুরজাহান, বোন সেলিনা আক্তার ও সাবিনা আক্তার বলেন, এক মাকে শান্তনা দিয়ে আরেক নিরাপরাধ সন্তানের মায়ের বুক খালি কেন। মমতামমী মা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করবেন। এসময় তারা আফসার উদ্দিনকে নির্দোষ দাবী করে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
মানবববন্ধনে বাবার মুক্তি চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির ছিলেন আফসার উদ্দিনের শিশু সন্তান আরদিনা আফসার আলিফ ও আহনাফ বিন আফসার ওয়াসিম। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান।
মানববন্ধনে বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসী অংশগ্রহন করেন। তাদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর উপস্থিতি ছিলো বেশী। বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার পেষ্টুন হাতে নিয়ে উপস্থিত গ্রামবাসীরা আফসার উদ্দিনকে নির্দোষ বলে তাকে ভালো আখ্যায়িত করে শ্লোগান দিতে থাকেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
এদিকে মানববন্ধন শুরু হওয়ার আগে সকাল থেকে পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে অন্য দিনের তুলনায় পুলিশের উপস্থিতি ছিলো বেশী। পৌর এলাকায় পুলিশ টহল দিতে থাকে। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চট্রগ্রাম সমাজের দিকে চলে যায়।