২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন

মানব বার্তা ডেস্ক:

আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক মহামতি যিশুর এদিন মাটির এ ধরাধামে আবির্ভাব ঘটে। ২ হাজার ১৪ বছর আগে এদিনে জেরুজালেমের বেথেলহেম শহরের এক গরিব কাঠুরের গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নেন যিশু। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়। ধর্ম প্রবর্তকের জন্মদিনটিকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা তাই ধর্মীয় নানা আচার ও উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে। এটি তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তাই আজ গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করবে তাদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব।

এ দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কে খ্রিস্ট ধর্মাবল্বীদের বিশ্বাস- ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মেরি। যাকে মা মেরি নামে ডাকে খ্রিস্টানরা। ‘ঈশ্বরের আগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ মা মেরি কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূতের কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস- বাংলায় এর নাম হল ‘যিশু’। শিশুটি কোনো সাধারণ শিশু ছিল না। ঈশ্বর যাকে পাঠানোর কথা বলেছিলেন মানবজাতির মুক্তির জন্য। যিশু নামের সেই শিশুটি বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনান।

যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে বিপথগামীরা ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তক যিশুকে মুসলমানরাও বিশ্বাস করে। তবে মুসলিম ধর্মমতে, যিশু হচ্ছেন হজরত ঈসা (আ.)। আর তার কুমারী মায়ের নাম বিবি মরিয়ম। ঈসা (আ.) মাটির দুনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেননি। নিরাপত্তার কারণে আল্লাহ তাকে আকাশে তুলে নিয়ে গেছেন। শেষ জমানায় দাজ্জালের ধোঁকা থেকে মানবতাকে রক্ষায় শেষ নবীর অনুসারী হয়ে পৃথিবীতে তার পুনরাগমন ঘটবে।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা এতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান।

বড়দিনের উৎসব ঘিরে সাধারণত যিশুর ভক্তরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের ফল্গুধারা। নানা ধর্মীয় আচার পালিত হয়। বর্ণিল আলোকের রোশনাইয়ে হেসে ওঠে গির্জা ও ঘরদোর। যিশু গোয়াল ঘরে জন্মেছিলেন বলেই তার অনুসারীদের ঘরে ঘরে প্রতীকী গোশালা করা হয়। আরও থাকে ক্রিসমাস ট্রি।

গির্জাসহ খ্রিস্টানপাড়ায় গৃহ-দুয়ার রঙিন বাতিতে উদ্ভাসিত করা হয়। প্রভাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা দিয়ে শুরু হয় দিনের। প্রায় সব পরিবারেই থাকে কেক, পিঠা, কমলালেবু, পোলাও-বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও উন্নত মানের খাবার-দাবারের আয়োজন।

সবচেয়ে বড় উৎসব হওয়ায় পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মেলবন্ধনও ঘটে। কোথাও ২৫ ডিসেম্বরের আগে যে ধর্মীয় পার্বণাদি শুরু হয়, তা চলে সপ্তাহব্যাপী। গির্জায় ধর্মীয় গান, কীর্তন, অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। শিশুদের জন্য ক্রিসমাস পার্টিসহ নানা ধরনের আয়োজন থাকে।

প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকেন সান্তাক্লজ। তিনি আসেন শিশুদের জন্য নানা উপহার ও চমক নিয়ে। এ কারণে সান্তা তার ঝুলিতে করে কী নিয়ে আসবেন- সেই অপেক্ষায় থাকে শিশুরা। বড়দিনের ছুটিতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। এভাবে বড়দিনের উৎসব পরমানন্দে কাটিয়ে দেন তারা।

বাংলাদেশের অভিজাত হোটেলগুলোকেও ছুঁয়ে যায় বড়দিনের উৎসবের আভা। উৎসবকে ঘিরে আনন্দমুখর আয়োজনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর অভিজাত তারকাবহুল হোটেলগুলো। সোনারগাঁওসহ এসব নামিদামি হোটেল সাজানো হয়েছে রঙিন বাতি, ফুল আর প্রতীকী ক্রিসমাস ট্রিতে।

সেই সঙ্গে চলছে বড়দিনের গানবাজনা। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কেও প্রতীকী ক্রিসমাস ট্রি বসানো হয়েছে। রোববার রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় গিয়ে দেখা যায়, বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন চলছে।

গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর প্রস্তুতি শেষ। গির্জার ভেতর বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। আলোকসজ্জায় দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। গির্জার মূল ফটকের বাইরে ছোটখাটো একটি মেলা বসেছে।

মেলার দোকানগুলোয় বড়দিন ও খ্রিস্টীয় নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তাক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হতে দেখা গেছে। গির্জার পাশের কবরস্থানে অনেককে মোমবাতি জ্বালাতে দেখা গেছে। আজ সকাল থেকে কয়েক দফায় বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

(Visited ১২ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

হযরত খাজাবাবা (রঃ) ও জামে আওলিয়া কেরামের পথ পূণরুদ্ধার সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদাতে কারবালা দিবসে ফেনীতে র‍্যালী
মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড সুন্নী মুভমেন্টের সমাবেশ
মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয় – আল্লামা ইমাম হায়াত
করোনায় সারাদেশে আরও ৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৯৯৮
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
পেপসির সঙ্গে বিষ খাইয়ে খুন, যুবকের যাবজ্জীবন
চাল আমদানির সুযোগ পাচ্ছে ১২৫ প্রতিষ্ঠান