২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত দাগনভূঞা বাদামতলীর আবাসন প্রকল্পের মানুষের

 

বিশেষ প্রতিনিধি:
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাদামতলী গ্রামে গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হয় বাদামতলী আবাসন প্রকল্প। ৬০টি পরিবারের জন্য নির্মিত এই আবাসনে নারী-শিশুসহ বাসিন্দা রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশজন। নানা বিপর্যয়ে ভিটে-বাড়ীহীন কিছু মানুষের বেঁচে থাকার ঠাঁই হয়েছে এখানে। আবাসন প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষগুলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌলিক চাহিদার শুধুমাত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। আবাসনের ঘরের বেশীরভাগ ছাউনি, বেড়া, দরজা, জানালাসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ঘরের চালে পলিথিন দিয়ে কোনোমতে বসবাস করছে। শুষ্ক মৌসুমেও আবাসন থেকে রাস্তায় আসা-যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো ছাড়া কোনো উপায় নেই। আবাসনের ছয়টি টিউবওয়েলের বর্তমানে তিনটি পরিত্যক্ত, বাকি তিনটিতে ঠিকমতো পানি উঠে না। বাসিন্দাদের দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয় খাওয়ার পানি। প্রতি ১০ পরিবারের জন্য চারটি টয়লেট স্থাপন করা হলেও সবগুলো টয়লেট সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায়। বর্ষাকালে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। অতি বৃষ্টিতে ডুবে যায় আবাসন এলাকা। তখন পরিবার-পরিজন, গৃহপালিত পশুসহ তাদের ঠাঁই নিতে হয় আশপাশের এলাকায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি আবাসনে কোনো মেরামত কাজ না হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা আর অবকাঠামোগত অব্যবস্থাপনায় অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছে বাসিন্দারা। সরকারিভাবে বলা আছে প্রত্যেক আবাসন প্রকল্পে থাকবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র-বিদ্যালয়, বাসিন্দাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দেয়া হবে সরকারীভাবে ঋণের ব্যবস্থা।

কিন্তু এ সুবিধাগুলো এখনো অধরাই রয়ে গেছে। আবাসনের সন্নিকটে সরকারি প্রাইমারি স্কুল না থাকায় এখানকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে। পরিবারগুলোর জন্য অনুষ্ঠানাদির জন্য কমিউনিটি সেন্টার করে দিয়েছে সরকার। অযত্ন অবহেলায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার কথা থাকলেও কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কর্মসংস্থান সংকটে চরম দারিদ্রতা আর অভাবের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। নেই কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক। বসবাসকারী বাসিন্দাদের রোগাক্রান্ত হলে উপজেলা সদরের হাসপাতালে ছাড়া আর কোন ব্যবস্থা নেই। বাদামতলী আবাসন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক কুলসুম আরা বেগম জানান, এখানকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে ঘর, স্কুল ও যাতায়াত ব্যবস্থা। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে যাতায়াতের সুবিধা নেই। খাওয়ার পানি অপর্যাপ্ত ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। টিউবওয়েলগুলো নষ্ট। আবাসনগুলো নির্মাণের পর থেকে আজো মেরামত হয়নি। পাশবর্তী অর্জুনের দীঘি থেকে পানি ব্যবহারের ফলে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই।

দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য। সমাধানকল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, আবাসনে কিছু সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে।

উল্লেখ্য; ২০০৬ সালের ৬ জুন দাগনভূঞা উপজেলার বাদামতলী মৌজায় ঐতিহাসিক অর্জুন রাজার দীঘির পাড়ে ৯ একর ভূমিতে আবাসন প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়।

(Visited ২১ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

হযরত খাজাবাবা (রঃ) ও জামে আওলিয়া কেরামের পথ পূণরুদ্ধার সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল আলিম এর সহধর্মীনি নুরজাহান বেগম আর নেই
ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার হাল ধরতে চান যারা
মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদাতে কারবালা দিবসে ফেনীতে র‍্যালী
মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড সুন্নী মুভমেন্টের সমাবেশ
মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয় – আল্লামা ইমাম হায়াত
এমপির বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিল-ঘুষির অভিযোগ
বঙ্গবন্ধুর সমাধীস্থলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের শ্রদ্ধাঞ্জলী