মানব বার্তা ডেস্ক:
বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে প্রথমে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন দর্শন বিভাগের ছাত্র সিফাতুল ইসলাম। পরে আরও কয়েকজন তার সঙ্গে যোগ দেন। তীব্র শীত উপেক্ষা করেই দু’দিন ধরে তাদের সেই কর্মসূচি চলছে। চার দফা দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা অনশন করছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে; এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে; ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
অনশনকারী সিফাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে বসেছি চার দফা দাবি নিয়ে। মূলত ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে আমরা বসেছি। আমরা ৩৮ ঘন্টার বেশি সময় ধরে অনশন করছি। এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কেউ আসেনি দেখা করতে, তবে বন্ধুরা এসেছে।’ শীতে কষ্ট হলেও বোনের ধর্ষণের বিচারের তুলনায় এটা তেমন কিছু না বলেও জানান তিনি। রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আজও সকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে ধর্ষকের বিচারের দাবি জানাচ্ছেন তারা। আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালেই শতাধিক শিক্ষার্থী ব্যানার ফেস্টুন হাতে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও পৃথকভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গতকাল থেকেই অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত ভার ঢাকা মহানগর (উত্তর বিভাগ) গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান হক সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ডিবি পুলিশ ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে। ধর্ষণের ঘটনায় অজ্ঞাত একজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বাবা। ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত রবিবার সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। ওসি বলেন, মামলার এজাহারে মেয়েটিকে একজন ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও ওই এলাকাটি একটু গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল এলাকা। ঘটনাস্থলটি আমরা এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। ঘটনার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শেওড়া যাওয়ার উদ্দেশে ঢাবির বাসে ওঠেন ওই শিক্ষার্থী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেওড়ার বিপরীত পাশে কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামেন তিনি। সেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তি মুখ চেপে তাকে পাশের একটি স্থানে নিয়ে অজ্ঞান করে ধর্ষণ করে।
রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে আবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌঁছান ওই ছাত্রী। পরে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করান তার সহপাঠীরা। এদিকে ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে ঢাবি ক্যাম্পাস। এ ঘটনায় বিচার নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।