নিউজ ডেস্ক:
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাবা জেলে থাকলে ছাত্রলীগ আমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো। আর মায়ের দিক-নির্দেশনায় তখন পরিচালিত হতো ছাত্রলীগ। এই ঐতিহ্যের কথা ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে। ছাত্রলীগের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। আদর্শ সততা ছাড়া কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকশিত হতে পারে না। শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে পায়রা উড়িয়ে, পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও এগিয়েও যাবে। যে মোতাবেক নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে এরই মধ্যে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। কাদের বলেন, শেখ হাসিনা একজন সফল রাজনীতিবিদই নন, তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়কও।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকা সাবেক নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১১১টি সাংগঠনিক জেলার সাবেক ও বর্তমান নেতারাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশ এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এর আগে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে সংগঠনটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় কার্জন হলে কেক কাটা হয়। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৬ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে। ৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
ছাত্রলীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা সপরিবারে হত্যার পর ছিনতাই হয়ে যায় স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা করেন। ছাত্রলীগ ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে। বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭২তম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দৈনিক জাগরণ