মহামারীতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে সংকট। কোভিট-১৯ এর বাঁধ সাদার তাঁরাই যেন নেই।করোনারা প্রাদুর্ভাবের কারনে গত ১৭ ই মার্চ থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সর্বশেষ তা বৃদ্ধি পেল ৬ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘ ছুটির ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার চরম ঘাটতিতে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বাসায় বসে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু করেছে অনলাইনে ক্লাস নেয়া।
অনলাইন ক্লাসের সুবিধাটা নিতে পারছেন শহরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।”অপরদিকে গ্রামে অবস্থান করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছেন অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে”।
নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেই অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে অবস্থান করছেন।গ্রামে নেটওয়ার্কের চরম সংকট তার উপরে সিম কোম্পানিগুলোর ডাটা প্যাক সহজলভ্য নয়।করোনাকালে আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের যেখানে নিত্যপ্রয়জনীয় পণ্য কেনা দায়।সেখানে অনলাইন ক্লাসের জন্য বাড়তি খরচ করাও যাচ্ছে না।অনেকের নেই প্রয়োজনীয় ডিভাইস।অপরদিকে শিক্ষকরাও প্রযুক্তিতে ততটা দক্ষ নন।
বেশিরভাগই অধ্যায় ভিত্তিক ভিডিও আপলোড করছেন ফেসবুক গ্রুপে বা পেজে।জুম বা গুগল মিটের মত এপস এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করে ক্লাস করতে পারছেননা।
বন্ধের ফলে বিভিন্ন পাব্লিক বিশ্বিবদ্যালয় এবং সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কা করছেন। অনেকের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল এবং পরীক্ষা আটকে আছে।
সেশনজট পরিত্রাণ এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখেই অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়।
তারা শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করে বিষয়টা কার্যকর করার চেষ্টা করেছেন।শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ক্লাস করতে বিরক্তি বোধ যেন না করে সে জন্য, তারা সপ্তাহে খুব অল্প পরিমাণে ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদেরকে ইন্টারনেট বিল দিচ্ছেন। “এছাড়াও কারো ডিভাইস না থাকলে ভার্সিটি থেকে ম্যানেজ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন”। যারা ক্লাসে যুক্ত হতে পারেননা তাদের জন্য ক্লাসের ভিডিও অনলাইনে আপলোড করে দেয়া হয়। এতে যারা বুঝতে পারে নি, তারাও একাধিকবার ক্লাসটি করার সুযোগ পায়।
একটা দীর্ঘ সময় অপচয় হওয়ার বদলে কিছুটা পড়াশোনা এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম।ঘরে একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ হচ্ছে।তবে অনেকেই এ সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করছে। তাদেরকে বাসার বাইরে বেরুতে হচ্ছে ক্লাস করতে।অনেকেই আবার ডিভাইসের অভাবে ক্লাস করতে পারছে না।
এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল, সাস্টে ও অনলাইন ক্লাস হচ্ছে।
বিইউপির শিক্ষার্থী ঝিলাম তাওহীদ বলেন,”সেশনজট এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলার কয়েকদিন পরেই পরীক্ষা নিতে পারবে যদি এখন অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ফলে”।তবে উপস্থিতি না নেওয়ার কারনে, কোন কোন শিক্ষার্থী ক্লাস করলো তা জানা যাচ্ছে না ফলে অনেকে ক্লাস করছেনা বলে জানান তিনি।
অনলাইন ক্লাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাবি।বাকৃবি,চবি,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু কিছু বিভাগের ক্লাস হচ্ছে তবে তা সীমিত।
করোনাকালে বেশি বিপাকে পড়তে যাচ্ছে ঢাবি অধিভুক্ত ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনেকের মাস্টার্স পরীক্ষা কয়েকটা হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।করোনার বন্ধ না হলে এতদিনে তাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।বছর পেরিয়ে এ বছরের ৬ মাস এসে গেলেও ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা পায়নি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল আবার কারও এখনো ল্যাব পরীক্ষা এবং বাকি।
সাত কলেজগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারনে তা ফলপ্রসু হচ্ছে না।বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে চলে যাওয়া নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং ডাটার মূল্য সহজলভ্য না হওয়ায় চাইলেও ক্লাস করতে পারছেননা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।
সরকারি তিতুমীর কলেজে অনলাইন ক্লাস শুরু হয় রমজানে তবে একটা বিভাগের ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে জুম এপস এর ক্লাসে উপস্থিতি সংখ্যা ৩০-৪০।যার বেশিরভাগ ঢাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থী, তারা ব্রডব্যান্ড এর আওতায় থাকায় অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারছে তেমন সমস্যা ছাড়াই।কিন্তু বড় একটা অংশ শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে ক্লাস চালিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তাই বেশিরভাগ বিভাগের শিক্ষকরা কাজে লাগাচ্ছে ফেসবুক গ্রুপকে সেখানে তারা ভিডিও আপলোড দেন। শিক্ষার্থীরা সুযোগমত দেখে নিচ্ছেন।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সোহেল রানা, তার মতে থমথমে শিক্ষা-কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।অনলাইনে ক্লাসের ফলে উপকৃত হচ্ছেন।তিনি আরও বলেন আগে মানুষের জীবন তারপরে শিক্ষা।তাই বর্তমান পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের মনের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।
ইডেন মহিলা কলেজের গনিত ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী -ফাতেমা আশা বলেন,সকলে যেন অনলাইন ক্লাসের সুফল ভোগ করতে পারে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।এছাড়াও তিনি জানান পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় বর্তমান সময়ে অনলাইন ক্লাস এর বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বর্তমান অবস্থায়ও সচল আছে যা একমাত্র অনলাইন ক্লাস এর মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে ।তবে যেখানে চলমান দুর্ভিক্ষের মধ্যে মধ্যবিত্তদের খাবার জোগাড় করতেই কষ্ট, সেখানে নিজ খরচে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করতে হিম-শিম খেতে হচ্ছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ।একদল শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস এর সুফল ভোগ করলেও অধিকাংশই পারছে না ।
এ বিষয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের, শিক্ষক সমিতির সম্পাদক মালেকা আক্তার ভানূ বলেনঃ দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীরা যেন পড়ালেখা থেকে বিচ্ছিন্ন না হয় সে জন্য তারা চেষ্টা করছেন অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সচল রাখতে।তবে অনেক শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছেন বর্তমানে।বন্ধে বাড়িতে বসে ঢাকার মেস ভাড়া দিতে হচ্ছে আবার অনেকে টিউশন করে নিজে চলতো এবং বাড়িতে টাকাও পাঠাতো।সবকিছু বন্ধ থাকায় তাদের ডাটা কিনে ক্লাস করা সম্ভব নয়।তাই ক্যাম্পাস খোলা হলে ক্লাসগুলো পুনরায় নেয়া হবে।এছাড়াও শিক্ষার্থীদের এই অবসরে বিভিন্ন দক্ষতা(প্রযুক্তিতে, গান শেখা,কবিতা আবৃত্তি, বিভিন্ন বই পড়া,এবংগবেষণা করা) অর্জনের পরামর্শ দেন তিনি।পরিস্থিতি ঠিক হলে পরবর্তী পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই নেয়া হবে।তাই পড়াশোনার ক্ষতির চিন্তা না করে, সবাই যেন সুস্থ ভাবে স্বাভাবিক ক্যাম্পাসে ফিরতে পারেন সেই আশা ব্যাক্ত করেন।
লেখক: শিক্ষার্থী,সরকারি তিতুমীর কলেজ , ঢাকা।