এক বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক বন্যা! সেইসাথে চলমান আছে করোনা নামক ভয়ংকর ভাইরাসের সংক্রমণ! একসাথে এত দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধার নদীতীরবর্তী এলাকার অসহায় সহস্রাধিক পরিবার।
গত বছরের জুলাই মাসে শহর রক্ষা বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৭টি পয়েন্ট তীব্র পানির চাপে ভেঙ্গে যায়। মুহূর্তেই তলিয়ে যায় গাইবান্ধা শহর সহ পুরো জেলা। পানি বন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ছয় লাখ মানুষ। গাইবান্ধার ইতিহাসে রেকর্ড সেই বন্যায় রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, রেললাইন ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ ক্ষতি হয় প্রায় তিনশো কোটি টাকার। একপর্যায়ে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রেল ও সড়ক পথের। এতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এ বছরেও ঠিক গত বছরের তুলনায় এক মাস আগেই (জুন) গাইবান্ধায় কয়েকদিন থেকে ক্রমাগত ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও কিছুটা অবনতি হয়েছে। এতে জেলার সাত উপজেলার মধ্যে চার উপজেলায় এ পর্যন্ত ২০ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি, ক্ষেত-খামার এখন পানিতে ভাসছে। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। আর প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
সোমবার (২৯ জুন) সন্ধ্যা সাত’টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৪৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান। তবে তিনি আরও জানান, উজান থেকে আসা এই পানির প্রবাহ আজ রাত থেকেই কমে যাবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। বন্যায় গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের নির্মান কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হলেও তেমন কোন ঝুঁকি নেই বলেও তিনি জানান।
এদিকে জেলায় চার উপজেলার সুন্দরগঞ্জের ৭টি ইউনিয়ন, গাইবান্ধা সদরের ৩টি, ফুলছড়ির ৬টি ও সাঘাটার ৩টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেতসহ সবকিছু এখন পানিতে নিমজ্জিত। আর হটাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তড়িঘড়ি করে শতশত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আস্তানায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আগত এই বন্যার ফলে ৫০ গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিতে ভাসছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ব্যবহার করছে নৌকা কিংবা ভেলা। সঙ্গত কারণেই হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কোথাও কোথাও আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি উঠেছে। আর বন্যা দুর্গত এলাকায় ব্যাপক পরিমানে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের খোঁজে হাজারো মানুষ। কোন উপায়ন্তর না থাকায় এদিক সেদিক চেষ্টা করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাঁশের খুটি গেড়ে উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।
দীর্ঘ তিন মাসের লকডাউনে বিপর্যস্ত মঙা-পীড়িত গাইবান্ধার নদীবেষ্টিত গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর শ্রেণির এই মানুষগুলো। করোনায় অর্থনৈতিক সক্ষমতা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষগুলো আয়ের মুখোমুখি হওয়ার আগেই মুখোমুখি হতে হলো সর্বগ্রাসী বন্যার। করোনা কালে এই মানুষগুলো কোনমতে জীবন টিকিয়ে রাখতে পারলেও, বর্তমান বন্যার করাল গ্রাস তাদের জীবনের শেষ আশাটুকুও বড় বেশি সংকটাপূর্ণ করে তুলবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন গাইবান্ধার বিশিষ্টজন।