১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও ঝুঁকি

দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার তিন মাস ৪দিন পার হয়ে গেল। শুক্রবার ( ১২ জুন) আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ছাড়ালো। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৫২৩ জন। করোনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার ৯৫।

চীন, ইতালি , স্পেন এর মত দেশ যেখানে ৮০-৮৫ দিনের মাথায় আশার আলো দেখেছিল সেখানে তিন মাসের মাথায় গত ৯ জুন থেকে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছেলো ৯৭৫ জন। ঐদিন ৩ হাজার ১৭১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। এরপর গত ১০ জুন আবারো আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সেদিন আক্রান্ত হলো ৩ হাজার ১৯০ এবং মৃত্যুবরণ করেছিল ৩৭ জন। ১১ জুনও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৮৭ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৩৭ জন। ১২ জুন অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে করোনায় আক্রান্ত হলো ৩ হাজার ৪৭১ জন এবং মৃত্যুবরণ করে ৪৬ জন। এভাবে প্রতিদিনই আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়াচ্ছে।

তিন মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে গত ৪ দিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধ্বমুখি রয়েছে। এছাড়াও করোনায় আক্রান্তের হারে বাংলাদেশ দশম স্থানে এবং ওয়াল্ডোমিটারের তালিকায় ১৯ তম স্থানে উঠে এসেছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’ বাংলাদেশকে সতর্ক করে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জুনে করোনার সংক্রমন বাড়তে পারে তাই প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার বিস্তার বন্ধ করতে পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন । জীবন ও জীবিকার সামঞ্জস্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সারাদেশে আক্রান্ত ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে যতটা বড় এলাকায় সম্ভব জরুরি লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন এ কমিটি। এ কমিটির নবম সভায় হাসপাতালের সেবার পরিধি বাড়ানোসহ পাঁচটি সুপারিশ করেন।

ইপিডেমোলজিস্টদের সমন্বয় গড়া সাব-কমিটি ঢাকাকে পুরোপুরি লকডাউন করতেই হবে-এ ধরনের স্পষ্ট এভিডেন্স বেজড বা ডাটা বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন । বিস্তারিত আলোচনার পর জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির আলোচকরা এপিডেমোলজিস্টদের সঙ্গে একমত হন এবং সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়, ঢাকা শহরকে কড়াকড়িভাবে সম্পূর্ণ লকডাউন করতে হবে। আর তা না হলে মৃত্যু মেনে নিতে হবে। এলাকাভিত্তিক লকডাউন কোনো সুফল বয়ে আনবে না। হলুদ জোন, লাল জোন মিলেমিশে আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, করোনা শনাক্তকরণে পরীক্ষা যত বেশি হবে, আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত তত বেশি হবে। এখনই হাসপাতালগুলোতে বেড পাওয়া যাচ্ছে না, সামনে কী হবে বলা মুশকিল। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে যাবেন না।

এদিকে ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জোন ভিত্তিক লকডাউনের সুপারিশে অনুমোদন দেন। তারপর জানানো হলো রবিবার থেকে ঢাকা এবং বৃহঃবার থেকে সারা বাংলাদেশ জোন ভিত্তিক লকডাউন করা হবে। কিন্তু ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে পরীক্ষা মূলক লকডাউন বা অবরুদ্ধ রাখা হলেও করোনায় আক্রান্তের হার বিবেচনা করে রেড, ইয়েলো, গ্রিন জোনে ভাগ করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত শুধু রাজারবাগ এলাকাকে পরিক্ষামূলক রেড জোনে ভাগ করা হয়েছে। এদিকে বৃহঃবারও পার হয়ে গেল অথচ এখন পর্যন্ত জোন ভিত্তিক ভাগ করার ব্যাপারে কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। অথচ আক্রান্তের দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকার মিরপুর এবং মহাখালী সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে । এছাড়াও সারা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ( ১২ জুন) ৮১ হাজার ৫২৩ জন আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৭৮% ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, সামনে আরো ভয়ংকর দিন আসছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অতি দ্রুত ঢাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা উচিৎ। গত চার দিনে বাংলাদেশে যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে বুঝা যায় বিশেষজ্ঞদের তথ্যই বাস্তবের পথে রূপ নিচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের এই তথ্যের পরও বাংলাদেশ কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কোন চিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বাংলাদেশ কঠোর কারফিউ লকডাউন না দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যাতিত সব কিছু খুলে দিয়েছে। এতে সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার সরকার জোন ভিত্তিক ভাগ করার সিদ্ধান্তও এখনো কেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না সেটি নিয়েও অনেকের সংশয়। গত চার দিনের আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে যদি দেশে কঠোর লকডাউন দেওয়া না হয় তাহলে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাধারণ কয়েকজন মানুষের সাথে কথা বললে তারা মানব বার্তা কে জানান, বাংলাদেশে না খেয়ে মারা গিয়েছে এমন কোন রেকর্ড আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি। এদিকে সরকার প্রায় তিন কোটি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করেছেন এবং দফায় দফায় খাদ্যসহায়তা দিচ্ছেন তাহলে কেন এখনো কঠোর লকডাউন না দিয়ে আমাদের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে? সরকার যেভাবে মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করছে তাতে টানা ১৪ দিন কঠোর লকডাউন/কারফিউ দিলে কেউ না খেয়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। এমতঅবস্থায় সাধারণ মানুষের জিবনের কথা বিবেচনা করে সরকার কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নে রূপ দিবে বলে আমরা আশা করি।

এদিকে ১১ জুন বৃহষ্পতিবার ঢাকা মহানগরীর পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল আদালতে রিট আবেদনটি দাখিল করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রিটে বাদী হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল ইসলাম।

মনজিল মোরসেদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রিট আবেদনে বিবাদীদের ওপর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে ঢাকাকে দ্রুত লকডাউন ঘোষণার জন্য। বলা হয়েছে লকডাউনের সময় কমিশনারদের (কাউন্সিলর) মাধ্যমে প্রত্যেক এলাকায় গরিবদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও মেডিসিন সরবরাহ করবেন সিটি করপোরেশনের মেয়ররা। এতে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে সরকার। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই ফ্রো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।

(Visited ২৭ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

হযরত খাজাবাবা (রঃ) ও জামে আওলিয়া কেরামের পথ পূণরুদ্ধার সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল আলিম এর সহধর্মীনি নুরজাহান বেগম আর নেই
ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার হাল ধরতে চান যারা
মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদাতে কারবালা দিবসে ফেনীতে র‍্যালী
মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড সুন্নী মুভমেন্টের সমাবেশ
মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয় – আল্লামা ইমাম হায়াত
এমপির বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিল-ঘুষির অভিযোগ
বঙ্গবন্ধুর সমাধীস্থলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের শ্রদ্ধাঞ্জলী