কুড়িগ্রামে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১ মাসের চুক্তিতে ২০ জন ক্লিনার ও ৯ জন সিকিউরিটি গার্ড এই ২৯ জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া দেরিতে হলেও সম্পন্ন করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
জানা গেছে চলতি বছরের মে মাসে জেনারেল হাসপাতাল কতৃপক্ষ মে – জুন এই ১ মাসের জন্য ২৯ জন আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের টেন্ডার আহবান করলে ৪৭ হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিয়ে আল আরাফাত সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড ও স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড সহ কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের দর একই হলেও অদৃশ্য কারন বশত স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কে চুড়ান্ত মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কতৃপক্ষ।
এদিকে বিষয়টি টের পেয়ে আল আরাফাত সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি মোঃ নুরুজ্জামান (জামান) হাসপাতাল কতৃপক্ষের নিকট গত ১৩ মে কতৃপক্ষের নিকট আবেদন দেন।
তিনি জানান, আউর্ট সোসিং নিয়োগের দরপত্র পূনঃ যাচাইয়ের আবেদন করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের সকল দপ্তরে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সকল বিভাগে অনুলিপি প্রেরণ করা হলেও তা আমলে না নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে স্বরলিপি নামক প্রতিষ্টানের কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে কাজ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন টেন্ডারে অংশগ্রহনের অত্যাবশ্যকীয় শর্ত যেমন সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ এর তালিকাভূক্তি, ব্যাংক সলভেনসি থাকতে হবে। এসব কাগজপত্র ভুয়া সত্বেও স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ কে কাজ দেয়া এবং সেই ১ মাসের কার্য্যাদেশটি নতুন অর্থবছরে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে বর্ধিত করার লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কতৃপক্ষ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই জনবল নিয়োগকে ঘিরে নানা নাটকীয়তার পর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এর তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চুক্তিনামাপত্র গত ৩রা জুন ২০২০ইং তারখে স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এর মেইল এ প্রেরণ করা হয়। যার সূত্রঃ জেলা: হাস:/কুড়ি:কমিটি /২০১৯-২০২০/৮৬৬/১(৪) তারিখঃ ২০.০৫.২০২০ ইং। এই পত্র প্রাপ্তির ৪ মিনিট পরে তিনি একই মেইলে কার্য্যাদেশের পত্রটিও পান যার সূত্রঃ জেনা:হাস:/ কুড়ি: কমিটি /২০১৯-২০২০/৮৭২ তাং ২২.০৫. ২০২০ ইং।
কিন্তু চুক্তিনামা সম্পাদন ব্যতিরেকে এবং ১৪ দিন পরে ইস্যুকৃত পত্র প্রাপ্তিতে ঠিকাদার বিস্ময় প্রকাশ করে চুক্তিপত্রের অসঙ্গতিসমূহ দূর করে নতুন করে চুক্তিনামা সম্পাদন ও কার্য্যাদেশ প্রাপ্তির লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এর তত্বাবধায়ক বরাবর ওই একই তারিখে স্বাক্ষরকৃত পত্র গত ৪ জুন ২০২০ ইং এ হাসপাতালে জমাদান ও মেইলে প্রেরণ করেন। ওইসময় স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী লিখিত অভিযোগে জানান যে, তার স্বাক্ষর, সিলমোহর ও প্যাড জাল করা হয়েছে। তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হাসপাতাল কতৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কোন চুক্তি সম্পাদন করেননি এবং জামানতের ৪৭ হাজার টাকার পে-অর্ডারও প্রদান করেননি।
তারপরও রহস্যজনক কারণে স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিঃ কার্য্যাদেশ পেয়ে জুন মাসের শেষ কার্যদিবসে নিজস্ব প্যাডে ২৫ জনের নাম জমা দিলে কতৃপক্ষ তা গত ৭ জুলাই অনুমোদন করেন।
উল্লেখ্য সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পথ্য,ধূপি, স্টেশনারী ও নন -স্টেশনারী মালামাল সরবরাহের টেন্ডার গোপন সংক্রান্ত সংবাদ দেশের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ চাপের মুখে উক্ত টেন্ডার বাতিল করেন। যার স্বারক নং- জেনা:হাস: /কুড়ি: কমিটি /২০১৯-২০২০/৯৯৮ তারিখঃ ০৮.০৬.২০২০ ইং।
বিভিন্ন অনুসন্ধান করে জানা গেছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতাল কতৃপক্ষ পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের দিকনির্দেশনায় টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত গত ১৫ জুলাই লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মেলেন্দু রায়ের নেতৃত্বে ২ সদস্যের তদন্ত টিম তদন্ত করলেও এখনও তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়নি বলে জানাগেছে।