দেশের কুড়িগ্রামের নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত এক সপ্তাহ যাবত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে, গত কয়েকদিনের বন্যার পানিতে ডুবে শান্ত, বেলাল ও মোস্তাকিম নামে ৩ শিশু মারা গেছে বলে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের সিভিল সার্জন নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে ৫১ সেন্টিমিটার ওপর এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার কমে ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে সদরের সারডোব, মোঘলবাসা ও নুনখাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
এছাড়া জয়কুমর, থেতরাই, কালিরহাটসহ আরও ১২টি স্পটে ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার। বিলীন হবার পথে সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ। ফলে এখানে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ করা হবে। এখনও ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ বন্যার্তদের।
উলিপুরের গুজিমারীর চরের বাসিন্দা সাত্তার আলী জানায়, আমাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। আমরা অনেকেই এখনও নদী থেকে উঁচু জায়গায় আছি। কোনও খাদ্য এখন পর্যন্ত কেউ দেননি।
এবারের বন্যায় জেলার ৮ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে জানা যায়। দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। স্যানিটেশন সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে এসব এলাকায়।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, করোনার পাশাপাশি বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবায় উপজেলা পর্যায়ে টিম কাজ করছে।
এদিকে, জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন অফিস জানায়, ইতোমধ্যে ৩৬ লাখ ৬৮হাজার টাকা ও ৩০২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।