২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

ময়মনসিংহে বাড়ছে ছিনতাই!

ময়মনসিংহের বিভিন্ন অলিগলি আর ফাকা নিরিবিলি জায়গায় চলছেই ছিনতাই। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছেনা ছিনতাইকারীদের দৌড়ঝাঁপ। পুলিশ একের পর এক ধরছে ছিনতাইকারীদের। তবে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে আবারও ছিনতাইয়ের সাথেই যুক্ত হচ্ছেন। দিনের আলো কেটে রাতের অন্ধকার আসলেই তাদের মনে ঈদের আনন্দ শুরু হয়। তারা অপেক্ষা করে নির্জন জায়গায়। সুযোগ বুঝেই যা পাবে তাই নিয়ে দৌড় দেয়। আর এসব কাজের জন্য তাদের অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

সূত্রে জানা যায়, ছিনতাইকারীরা অনেক তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে নিরবে তাদের কাজ হাসিল করে। তাদের রয়েছে বিভিন্ন চক্র। মাঝে মাঝে ছদ্মবেশী কৌশল ধারণ করে। কোনো
ছিনতাইকারী নিজেই রিকশা চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যায়। যাত্রী যেখানে যাবে,রাস্তায় সমস্যা বলে উল্টো পথে ঘুরিয়ে নির্জন জায়গা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যদি কোনো ভাবে যাত্রীকে বুঝিয়ে নিতে পারে তাহলেই উদ্দেশ্য সফল হয়। নির্জন জায়গায় তাদের আলাদা ছিনতাইকারী অপেক্ষা করে, এর আগেই তাদের ঐ ছিনতাইকারীদের এসএমএস কিংবা ফোন করে তাদের আশা-যাওয়ার সংকেত দিয়ে দেয়া হয়। আসা মাত্রই চাকু কিংবা অন্যকিছু দিয়ে যাত্রীকে ভয় দেখিয়ে সব নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

জানা যায়, কোনো ছিনতাইকারী দুই-তিনজন একত্রে দলবদ্ধ হয়ে থাকে। সরাসরি নির্জন জায়গায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিংবা প্যাডেল মারা রিকশার যাত্রীকে আটকিয়ে সর্বত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের সাথে কাড়াকাড়ি করলে ঘটে যায় বিপদ। পরে হাতিয়ে নেয়া টাকাগুলো নিরিবিলি বসে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় তারা। নিজেদের মধ্যে ছিনতাই করা টাকার ভাগ নিয়ে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলও হয়ে থাকে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহে প্রতিনিয়ত ছিতাইয়ের কবলে পরে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা হারাচ্ছেন নগদ টাকা, মোবাইল সেট, ঘড়ি, স্বর্ণালংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। শহরের কাঁচিঝুলি,জিলা স্কুল মোড়, কলেজ রোড, পুরাতন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড,টাউন হল মোড়, জেসি গুহ রোডের মেডিকেল গেইট থেকে বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত স্থান, চরপাড়া, পলিটেকনিক মোড়, পাটগুদাম মোড়, কেওয়াটখালী বীজ পাটগুদাম, নতুন বাজার রেল গেইট, নওমহল বোচারপুল, ব্রাহ্মপল্লী, কিষ্টপুর এবং নগরীর ময়লাকান্দা, শম্ভুগঞ্জসহ অনেক স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

নগরীর সচেতন মহল বলছেন, ছিনতাই আতঙ্ক নিয়েই সকলকে পথ চলতে হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্টানগুলোর উদাসীনতার কারনে ছিনতাই বাড়ছে। ঈদের আগে ছিনতাইকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মাধ্যমেই ছিনতাই নির্মূল না হলেও ছিনতাইয়ের ঘটনা কমানো সম্ভব।

গতবছরের লোমহর্ষক ঘটনা জানাতে একটু পিছনের দিকে যেতে চাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বয়স (৩৮), তিনি একজন দোকান ব্যবসায়ী। তিনি জানান, নগরীর পাটগুদাম ব্রীজ হয়ে শম্ভুগঞ্জ পাড় হয়েই তার বাসা। প্রতিদিন দোকান বন্ধ করে পাটগুদাম বাসটার্মিনালে আসতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। ঐদিন একটু দেড়ি কারাতে ১২টা বেজে গিয়েছিল। একটি খালি সিএনজিতে চালক তাকে ডেকে বলল ভাই কোথায় যাবেন? তিনি বললেন আমি বাসে যাব। ব্যবসায়ীর হাতে একটি ব্যাগ আর একা পেয়ে ছিনতাইকারী আবারও বলল ভাই আমি এখনই সিএনজি ছেড়ে দেব। বাসের ভাড়াই দিয়েন সমস্যা নেই। আমিও এই পথেই যাবো। যাত্রী এক-দুজন হলেই হলো। চালকের কথায় বিশ্বাস করে সিএনজিতে উঠে বসলেন তিনি। চালক আরো দুইজনকে উঠাল। একজনকে ব্যবসায়ীর সাথে আরেকজনকে সামনের সিটে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই দুইজন যাত্রীটিও যে ছিনতাইকারী তা ঐ ব্যবসায়ী বুঝতে পারেননি। পাটগুদাম ব্রীজ পাড় হয়ে ময়লাকান্দা পর্যন্ত আসতেই সামনের যাত্রী ( ছিনতাইকারী) জোড়ে বলে গাড়ী থামান ভাই জুতো পড়ে গিয়েছে। যথারীতি সিএনজি থামানো হলো। তখন আশেপাশে কেউ নেই। এই রাস্তাটি ভাঙ্গা আর রাস্তার পাশে ময়লার বাগাড় থাকার কারনে অন্য গাড়ীগুলো দ্রুত যাচ্ছিল।

তখন ব্যবসায়ীর সাথে থাকা যাত্রী সাজা (ছিনতাইকারী) পেট বরাবর ধারালো চাকু ধরে বলল যা আছে সব দে! সামনের সিটে বসে থাকা যাত্রী সাজা ছিনতাইকারীও কাছে এসে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আর চালক তার সীটেই ভদ্রভাবে বসে ছিল। তখন সাথে থাকা দোকানের ২৫ হাজার টাকা এবং একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তখন শরীরটা ঘেমে সার্ট ভিজে যায়। ছিনতাইকারীদের চেহারাটা দেখে মনে হচ্ছিল এখনই টাকা দিয়ে ইয়াবা কিংবা যেকোনো মাদক সেবন করবে। মনে হচ্ছিল হয়ত নতুন জীবন পেয়েছি। এটি তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। ঘটনার সময়টা এমন ছিল, যদি তখন এই টাকাগুলো না দেয়া হতো চাকু মেরে জীবন কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করতোনা বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও শহরে ঈদের আগে ছিনতাইকারীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন যাবত ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে ময়মনসিংহ হেল্পলাইনে বিভিন্নজন পোষ্টও দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন আমি আজ বেচে গিয়েছি,আপনারা সতর্ক থাকুন। আবার কেউ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ার অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন।

রাসেল মিয়া নামের একজন লিখেছেন-
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ছিনতাইকারীতে আবার ভরে গেছে ময়মনসিংহ। (১৮ জুলাই) দুপুর ঠিক ২ টায় একটি কম্পিউটার মনিটর কিনে দুর্গাপুরে ফিরছিলাম। গাঙ্গিনারপাড় ট্রাফিক মোড় থেকে ব্রীজের অটোতে ওঠি। একটু সামনেই আরেকজন ওঠেন। এরপর বারী প্লাজার সামনে থেকে ৩ জন অটোর ভিতরে বসতে চাইলে আমি সামাজিক দূরত্বের কথা বলি। কিন্তু তারা আমার পাশের জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন বাসা কই? কি শপিং করছেন ইত্যাদি।
আমি ব্যপারটা বুঝে আমার এক বড় ভাইকে কল করার জন্য ফোন বের করি। ইতোমধ্যে একজন আমার গোপন অঙ্গে একটি খোর ধরে রেখেছে, আমি কাউকে কল করলে তারা কাটাকাটি করবে। মনিটর, ব্যাগ এসব নিয়ে নিজেকে ডিফেন্স করাও তখন সম্ভব ছিলোনা। পাশের জনের কাছ থেকে ৪০টাকা আর আমার ১৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা নিয়ে গেল।

হাসিবুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন –
আমরা কি সত্যিই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি?
ঝুম বৃষ্টির সময় ব্রীজ থেকে বাঘমাড়া আসতেছিলাম সিএনজি দিয়ে, সঙ্গে ড্রাইভার ছাড়া কোনো যাত্রীও ছিলো না, সামনের সীট গুলো ফাঁকা পেয়ে রেল ক্রসিং আসতেই দুটো ছেলে লাফালাফি করে দুপাশের সামনের সীটে উঠলো।

একটু এগোতেই তারা অনেক কথাবার্তা শেষে ভাটিকাশর গোরস্থান গেইট এসেই সিএনজি থামিয়ে দুজন দুপাশে দাঁড়িয়ে গেছে এবং টাকা চাচ্ছে আমার কাছে। আমি বললাম দেখ ভাই তদের দুজনকেই চিনছি। অযথা ঝামেলা করিসনা, চলে যা। ভয় না পেয়ে এসব হুমকি দেওয়ায় দুজনই দুটো গালি দিয়ে চলে গেছে। গাড়ীতে উঠার ক্ষেত্রে সকলকে সতর্ক করেছেন তিনি।

শনিবার (২৫ জুলাই) ময়মনসিংহ ট্রাফিকের উপ-পুলিশ পরিদর্শক শুভ্রত আচার্য নগরীর পাটগুদাম ব্রীজ মোড় এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের সময় দৌড়িয়ে দুই চিহ্নিত ছিনতাইকারীক আটক করে। এর মধ্যে একজন কয়েকদিন আগেই ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় জামিন পেয়ে বের হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানা ও ১ নং পুলিশ ফাঁড়ি যৌথ অভিযান চালিয়ে ৭ জন ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেন। গত দুইদিন আগে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ মানব বার্তাকে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইকারী ধরা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ছিনতাই হওয়া মোবাইল, মোটরসাইকেলও আমরা উদ্ধার করে দিচ্ছি। শনিবার (২৫ জুলাই) তিনজন ছিনতাইকারীকে মাদকসহ ধরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ছিনতাইকারী ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে এবং ঈদ নির্বিঘ্ন করতে ডিবি পুলিশ তৎপর রয়েছে।

(Visited ৫৪ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

হযরত খাজাবাবা (রঃ) ও জামে আওলিয়া কেরামের পথ পূণরুদ্ধার সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল আলিম এর সহধর্মীনি নুরজাহান বেগম আর নেই
ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার হাল ধরতে চান যারা
মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদাতে কারবালা দিবসে ফেনীতে র‍্যালী
মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড সুন্নী মুভমেন্টের সমাবেশ
মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয় – আল্লামা ইমাম হায়াত
এমপির বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিল-ঘুষির অভিযোগ
বঙ্গবন্ধুর সমাধীস্থলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের শ্রদ্ধাঞ্জলী