২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

তাল পাকে ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।’
বহুদূর থেকেও সে গাছ দেখে বলা যায় ‘ওই দেখা যায় তালগাছ, ওই আমাদের গাঁ’।
শরৎতের ছোঁয়া লেগেছে কাশবনে ফুটছে শিউলী ফুল। নদীর তীর, বিলের ধারে সাদা কাশফুলে ভরে গেছে। বাংলাদেশে ভাদ্র ও আশ্বিন শরৎতকাল। ভাদ্রে গরম মিলে এ সময় কখনো টানা, কখনোবা দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়। কখনো ঝিরিঝিরি মিষ্টি বাতাস বয়ে যায়, কখনো পড়ে ভ্যাপসা গরম। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে তাল পাকে। তাই ভাদ্র মাস এলেই মনে পড়ে তালের কথা। তাল একটি সুস্বাদু ও লোভনীয় ফল।

কাঁচা ও পাকা—দুই অবস্থায়ই তাল সুস্বাদু খাবার। শুধু মাঝখানের সময়টাতে তালের স্বাদ তিতা। কচি তাল কচি ডাবের মতোই সুস্বাদু। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে এই কচি তালশাঁস তৃষ্ণা নিবারণ তো করেই, সঙ্গে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে দেহ রাখে ক্লান্তিহীন। ডাবের পানির মতোই এটি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। পুষ্টিবিদেরা বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম তালশাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলো ক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লোহা ১ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া আছে আমিষ, চর্বি, থায়ামিন, রিবোফাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন সি। দেখা যাচ্ছে, বেশ পুষ্টিকর খাবার এই তালশাঁস। তালের ভেষজ গুণ প্রচুর। বলা হয়ে থাকে, পাকা তাল ঘুম, মূত্র, রক্ত, কফ, শুক্র ও পিত্তবর্ধক।

বাঙালির রসনা বিলাসের জন্য ভাদ্র মাসে তালের তৈরি নানা খাদ্য আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন। কি ধনী কি দরিদ্র, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শরতের স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় কিম্বা শিউলি ঝরা সকালে তালের তৈরি নানা রকমের আয়োজন হয়ে ওঠে বাড়তি পাওনা।

গ্রাম অঞ্চলে গেরস্ত বিকালে বাজার থেকে পাকা তাল কিনে নিয়ে এসে হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে গিন্নিকে।

“”কে বারে কুন্টি গেলে রাফার মাও
হাটোত থেকে আনছি দুইখান পাকা তাল
জলদি করে তাল দুখান দিয়ে পিঠা বানাও
দুধের সাথে
তালের রস দিয়ে বানাও না কে তালদুধ
গরম গরম তালের পিঠা কোনা খেয়ে
কলজেটা জুড়াই””
(বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায়)

পাকা তালের রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া আর গমের আটা মিশিয়ে বানানো হয় তালের বড়া, চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানানো হয় পিঠা, দুধের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে বানানো হয় তালক্ষীর। এ ছাড়া কোথাও কোথাও খাওয়া হয় তালের রুমালি রুটি, ময়দা-আটার সঙ্গে মেখে পরোটা, তালের সরু চাকলি মানে তাওয়ার ওপর রেখে বানানো হলদে সাদা রঙের ফিনফিনে দোসা-ক্ষীরে ডুবিয়েই যা খাওয়ার নিয়ম। এ ছাড়া এই আধুনিক সময়ে রন্ধন পটীয়সীরা তৈরি করে থাকেন কলাপাতায় তালপিঠা, তালের স্পঞ্জ কেক, কেক গ্লেইজ।

এছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী, নন্দোৎসব এবং ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমীতে ‘তালনবমী’ ব্রত এই তিন পর্বের মূল উপাদান তাল ও তাল দিয়ে তৈরি খাবার।

(Visited ৭৮ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

হযরত খাজাবাবা (রঃ) ও জামে আওলিয়া কেরামের পথ পূণরুদ্ধার সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল আলিম এর সহধর্মীনি নুরজাহান বেগম আর নেই
ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার হাল ধরতে চান যারা
মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদাতে কারবালা দিবসে ফেনীতে র‍্যালী
মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড সুন্নী মুভমেন্টের সমাবেশ
মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয় – আল্লামা ইমাম হায়াত
এমপির বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কিল-ঘুষির অভিযোগ
বঙ্গবন্ধুর সমাধীস্থলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের শ্রদ্ধাঞ্জলী