অভিনেত্রী পায়েল সরকার, চলচ্চিত্র জগতে আসেন ২০০৪ সালে। শেষ ছবি ‘মুখোশ’ হিট হয়নি। নতুন ছবি ‘ম্যাজিক’র কাজ শুরু হয়েছে সদ্য। তবুও পায়েল আজকাল বড্ড চুপচাপ।
ইন্ডাস্ট্রি বলছে, পায়েল স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছেন। নিন্দুকেরা বলছে, তিনি বড্ড আনসোশ্যাল। সত্যিই কি তাই? পায়েল কী বলছেন?
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পায়েল। সাক্ষাৎকারটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
আপনি নাকি ইচ্ছে করে লুকিয়ে আছেন?
(অবাক হয়ে) মানে?
টালিউডের একটাও হেভিওয়েট পার্টিতে যান না আর! কেন?
ওহ! এই ব্যাপার। পার্টি অ্যাটেন করি না, কারণ ভালো লাগে না। এত পার্টিতে গেছি, এত কথা বলেছি, আর ইচ্ছে করে না যেতে। বোর হয়ে গিয়েছি।
ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা ধরে রাখার চাবিকাঠি তো ওই সব হাই প্রোফাইল পার্টি..
(থামিয়ে দিয়ে) আমার মনে হয় না। প্রতিদিন নতুন নতুন পরিচালক স্ক্রিপ্ট শোনাতে ফোন করেন আমাকে। আমি করি বা না করি, সেটা পরের ব্যাপার। তারা যে প্রথমেই আমাকে কাস্ট করার কথা ভেবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তার জন্য আমার কোনো পার্টির দরকার পড়ে না। আর তাছাড়া ওই পার্টিতে গিয়ে পিআর করে অফার পাব, এটা না আমার দ্বারা হবে না। আর এখন এই সব খুব একটা ওয়ার্ক করেও না।
গোটা লকডাউনে সেলেবরা কত রান্নাবান্না- ওয়ার্ক আউটের ছবি দিলেন, পায়েল সরকারকে তো সেসব করতেও দেখা গেল না!
(হাসি) ফ্রেঞ্চ শিখছিলাম। শিখেওছি বেশ খানিকটা। এবার আপনি বলুন তো, আমি একটা ভাষা শিখছি সেটা কী করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেব?
নতুন ছবির শুটিং শুরু করেছেন। নায়ক অঙ্কুশ, নায়িকা ঐন্দ্রিলা, আর আপনার চরিত্রটা?
আমি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের চরিত্রে। বলা যেতে পারে, আমার চরিত্রকে কেন্দ্র করেই অনেক কিছু রহস্য উন্মোচন হয় ছবিতে। আসলে এই চরিত্রটাই এমন, যদি ভেঙে বলতে যাই, গল্পটাই বলে ফেলব।
সংক্রমণের ভয় হচ্ছে না?
আমাদের কাজে তো আর ওয়ার্ক ফ্রম হোম হয় না। তাই কাজ করতেই হবে। নিজের মেকআপ নিজেই করছি। গাইডলাইন ফলো করছি।
কাজ-ব্যস্ততা তো শুনলাম , একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি।
বলুন।
ইন্ডাস্ট্রি বলে, পায়েল সরকার যেভাবে শুরু করেছিল সেভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। আপনি একমত?
একটা ইন্ডাস্ট্রিতে ১৩/ ১৪ বছর কাটিয়ে দিলাম। আর ইন্ডাস্ট্রির নিয়মেই নতুন মুখ উঠে আসবে। পরিবর্তন হবে। তাই যারা এই সব বলে তাদের আর কোনো এক্সপ্ল্যানেশন দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে তো আমার মনে হয় না।
‘প্রেম আমার’ , ‘বোঝে না…’-তে তুখোড় অভিনয়, ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ মানেই পায়েল সরকার, সেইখান থেকে পর পর বেশ কিছু ছবি ফ্লপ। এমনটা কেন হল বলে আপনার মনে হয়?
ছবি হিট হবে না ফ্লপ হবে সেটা শুধুমাত্র একজন অভিনেতার উপর নির্ভর করে কি? আর তাছাড়া আগে যা করেছি প্রতিবারই পরের ছবিতে ইমেজ ভাঙার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও তাই করব। ‘এবার শবর’, ‘ঈগলের চোখ’ এই দেখুন। আর তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসেবে বলছি, আপনি যদি শেষ চার-পাঁচ বছরের গ্রাফটা দেখেন, সেভাবে ছবি কিন্তু এখন আর ওয়ার্ক করছে না। আমরা সবাই একটা ট্রান্সফরমেশন প্রসেসের মধ্যে দিয়ে চলছি।
কীরকম?
প্রতি মুহূর্তে দর্শকের টেস্ট বদলাচ্ছে। আমি দশ বছর আগেও যে সব কমার্শিয়াল ছবি করেছি, সেগুলো কিন্তু এখন অ্যাকসেপটেড হবে না। আমি নাম নিতে চাই না, এমন অনেক ছবি রয়েছে, যেগুলোতে অনেক পোটেনশিয়াল ছিল কিন্তু হিট হয়নি। আবার উল্টোটাও হয়েছে। আর তাছাড়া আপনি যে সময়টার কথা বলছেন, সে সময় শুধুমাত্র সিনেমা ছিল। এখন ওয়েবও আছে। ওয়েবয়েও বেশ কয়েকটি কাজ করলাম আমি।
তার মানে আপনি কী বলছেন? ওয়েবই ভবিষ্যৎ?
না, ওয়েবই ভবিষ্যৎ সে কথা না বললেও, একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তো বটেই।
ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন পায়েল সরকার একটু বেশিই চুজি, সহজে কিছুই পছন্দ হয় না…
এত বছর ধরে কাজ করছি তো, তাই চেষ্টা করেছি আগের কাজ এবং আগামী কাজের মধ্যে ফারাকটা রাখার। আমি যদি তাতে বছরে একটা-দু’টোও ছবি করি, আই ওন্ট মাইন্ড। কিন্তু ওই দু’টো ছবি করে যেন আমার ভালো লাগে। এবার সেটাও হিট হবে না ফ্লপ হবে, আমার জানা নেই। ওই যে বললাম সিনেমা একটা গ্রুপ ওয়ার্ক। ফ্লপ বা হিটের দায় শুধু অভিনেতার উপর বর্তায় না।
নিজের সম্বন্ধে সবচেয়ে অবাক করা গসিপ কী শুনেছেন?
প্রচুর আছে। রিসেন্টলি একটা শুনলাম, আমি বিয়ে-টিয়ে করে বিদেশে চলে গিয়েছি। আর ছবি করব না।
যাচ্ছেন নাকি? পায়েল বসছে নাকি ছাদনাতলায়?
আরে ধুর, না না।
সত্যিই কি? পায়েল সরকারের প্রেম নিয়ে কিন্তু গত তিন বছর ধরে আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। লুকোচ্ছেন? (খিলখিলিয়ে হাসি) আরে কিছু শোনার মত থাকলে তো শুনবেন।
প্রেম নেই? একেবারেই নেই। আরে যদি কাউকে পছন্দ না হয়, কী করব? জোর করে তো আর প্রেম করতে পারব না! আমি জানি, আমার চারপাশটা খুব বোরিং। আশেপাশের মানুষগুলোও। প্রেম নেই, পার্টি নেই। কী করব বলুন, ডিক্যাপ্রিওর মতো কাউকে পাচ্ছি না তো।