কুমিল্লার মুরাদনগরে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কোম্পানীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেছে। সিএনজি অটোরিকশার পাশাপাশি এখন সড়কে চলছে নৌকা। গন্তব্যে পৌঁছতে অল্প ভাড়ায় এ নৌকাই যেন আশার আলো।
২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর ২০২০ সালে সড়কে এমন নৌকা দেখছে ঐতিহ্যবাহী কোম্পানীগঞ্জবাসী। প্রায় দুই’শ বছর আগে থেকেই বাজারটি মুরাদনগর উপজেলাসহ আশপাশের পাঁচটি উপজেলা এবং ছয়শতাধিক গ্রামের মানুষদের চাহিদা পুরণ করে আসছে। কালের বিবর্তনে বাজার কমিটির অব্যবস্থাপনাসহ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বাজারটি দিন দিন তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।
এদিকে বাজারের অভ্যন্তরের একটি পুরাতণ খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারে হাটুর উপড়ে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই বাজারটি একেবারে অচল হয়ে পড়ে। জল এবং স্থল পথে সমৃদ্ধ এ বাজারে কয়েক হাজার বড় বড় ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে চরম ভোগান্তীর মাধ্যমে। প্রতিদিনই হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে মুখরিত এ বাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতার ভোগান্তি যেন এখন নিত্য সঙ্গী।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে বাজারে গিয়ে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র, সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা ও রিকশার পাশাপাশি চলছে নৌকা। মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ১০-১৫ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে রাস্তায় নৌকা নিয়ে নেমেছেন মাঝিরা। সকালের কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে বাজারে জমেছে কোমর সমান পানি। এ অবস্থা দেখে অধিকাংশ বিক্রেতারা দোকান বন্ধ করে দেন। এরপর ক্রেতা বিক্রেতার চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। বাজারের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ক্রেতা বিক্রেতারা নৌকা যোগে পারাপার হচ্ছিলো।
বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন, এ বাজারে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই যুগ আগে থেকেই অতীতে জলাবদ্ধতার এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বাজারের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সেলিম জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এখনি যদি প্রশাসন বাজারের জন্য সঠিক কোন উদ্যোগ গ্রহন না করে তা হলে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। টেলিকম ব্যবসায়ী বরকত উল্লাহ বলেন, আজকে বাজারের এক গলি থেকে অন্য গলিতে নৌকাযোগে যেতে ১০টাকা করে দিতে হচ্ছে জনপ্রতি। আসলে বাজারের এমন হবে তা কেউ ভাবেনি। কিন্তু ব্যবসার তাগিদে যেতে হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাসেল বাবু বলেন, চারদিকে পানি আর পানি। কোথাও বের হওয়া যায় না, বাজার সদাই করা যায় না। রাস্তায় দেখলাম নৌকা চলছে। পানি না কমলে যাতায়াতের মাধ্যম নৌকাই হবে আমাদের একমাত্র ভরসা।
এ বিষয়ে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারে অনেক সমস্যা রয়েছে যার কারনে এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। শিগ্রই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা মাননীয় এমপি মহোদয়সহ প্রশাসনের নিকট আবেদন করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিষেক দাশ জানান, বাজারের ব্যবসায়ীরা সচেতন হলে বাজারের বর্তমান চিত্র এমন হতো না। বেশীরভাগ ব্যবসায়ীরা অপ্রয়োজনীয় মালামাল এবং পলিথিন ফেলে ড্রেনগুলোতে পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে। তবে বাজারে আরো আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার দরকার। এ বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। শিগ্রই বাজারের উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে বলে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।