১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

জবির হলগুলো দখল করলো কারা?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর গত ২০ অক্টোবর ২০২০, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জবির প্রথম ছাত্রীহল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীহল উদ্বোধন করা হয়। তবে এখন সুরাহা হয়নি বেদখল হয়ে থাকা তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্রহলগুলোর। প্রায় তিন যুগ ধরে প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে হলগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে মুসিহ মুহিত অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফার্মটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, তৎকালীন কলেজের ১২টি হল ছিল। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষাার্থীদের সংঘর্ষে হলগুলো বেদখল হয়।

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে পুরান ঢাকার হিন্দুদের ফেলে যাওয়া কয়েকটি পরিত্যক্ত বাড়িতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস শুরু করে। মূলত ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে পরিত্যক্ত বাড়িগুলো ছাত্রাবাসে পরিণত করা হয়। বিভিন্ন সময় কলেজের অধ্যক্ষদের নাম জড়িয়ে হলগুলোর নামও দেন তারা।

আবদুর রহমান হল : আরমানিটোলা বটতলার ৬, এসি রায় রোডের হলটিতে বাস করছেন পুলিশ সদস্যরা। ঢাকা আঞ্জুমান সংস্থা হলটি দখলের চেষ্টা করছে বলে জানা যায়। ১৯৯৬ সালে সংস্থাটি মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে। মালিকানার রায় পেলেও মামলা পরিচালনায় ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করায় সংস্থাটির সভাপতি কেএম আকবরের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে শাহবাগ থানায় মামলা হয়।

মূলত এর মালিক ছিলেন চিন্ময়ী দেবী। ১৯৬৫ সালে যা অর্পিত সম্পত্তি হয়। পরে তৎকালীন কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে থাকা শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হলে তারা হলটি ছেড়ে দেয়। পরে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের পরিবারের লোকজন বসবাস শুরু করে। তবে মূল ফটকে এখনও হলের সাইনবোর্ড রয়েছে। অক্ষত আছে অবকাঠামো।

শহীদ আনোয়ার শফিক হল: আরমানিটোলা মাহুতটুলির ১, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডের ৪০ কাঠার হলটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করে টিন, হার্ডওয়ার ও ফার্নিচারের গোডাউন তৈরি করেছেন তারা। এদের অনেকেই ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিমের আশীর্বাদপুষ্ট বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোডাউনের কর্মচারীরা। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে হলটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা।

তিব্বত হল : পাটুয়াটুলী ওয়াইজঘাট এলাকার ৮ ও ৯নং জিএ ল পার্থ লেনের ৮.৮৮৯ কাঠার হলটিও দখলের অভিযোগ রয়েছে সাংসদ হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। ২০০১ সালে হলটির স্থানে স্ত্রীর নামে গুলশান আরা সিটি মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন তিনি। প্রতিবাদে কয়েক দফা আন্দোলনেও নামে শিক্ষার্থীরা। তবে তিনি জায়গাটি তার নিজস্ব বলে দাবি করেছেন।

৯০-এর দশকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে স্থানীয়রা হলটির দোতলায় আগুন দিলে তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান শিক্ষাার্থীদের নিয়ে আসেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত ‘তিব্বত হল’ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও শিক্ষাার্থীরা আর হলটিতে ফিরে যেতে পারে নি।

সাইদুর রহমান হল ও রউফমজুমদার হল: হিন্দুদের দানকৃত হল দুটির বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। মৌখিকভাবে দান করা সম্পত্তিটি জনৈক আইনজীবী ইব্রাহিম জাল দলিল করে বিক্রি করে দেন বলে জানা যায়। ১৫, ১৭ ও ২০ যদুনাথ বসাক লেন, টিপু সুলতান রোডের সাইদুর রহমান হলে হার্ডওয়ারের দোকান তৈরি হয়েছে।

পাশের রউফ মজুমদার হল জাল দলিলের মাধ্যমে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা বিক্রি করে দিয়েছে।

শহীদ আজমল হোসেন হল: পাটুয়াটুলীর ১৬ ও ১৭নং রমাকান্ত নন্দী লেনের হলটিতে বসবাস করত পুলিশ সদস্যদের পরিবার। কিছু অংশে গড়ে উঠে ছিল বিভিন্ন সমিতি। ১৯৯৬ সালে একাংশ দখল করেন স্থানীয় মোশারফ হোসেন খান। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কথিত ‘বেগম রোকেয়া (শহীদ পরিবার)’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জায়গাটি দখল করা হয়। হলটির অবকাঠামো এখনও অক্ষত রয়েছে।

বজলুর রহমান হল: বংশালের ২৬, মালিটোলার হলটিতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় বানানো হয়েছে। কিছু অংশ স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করেছে। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ছাত্ররা হলটি ছাড়তে বাধ্য হন।

বাণী ভবন: ১নং ঈশ্বরচন্দ্র দাস লেনের ৩৫ ও ৩৬ প্যারিদাস রোডের ১০ কাঠার বাণী ভবনের কিছু অংশে জবির কয়েকজন কর্মচারী বসবাস করলেও দুই-তৃতীয়াংশ বেদখল রয়েছে। আর স্থানীয়দের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে অবস্থানরত কর্মচারীরা। হলটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় পাবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।

নজরুল ইসলাম হল: গোপীমোহন বসাক লেনের ৫/১,২,৩,৪ ও ৬নং টিপু সুলতান রোডের হলটির ২০ কাঠা জায়গায় গড়ে উঠেছে জামেয়া শরীয়াবাগ জান্নাত মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সাবেক কমিশনার আওলাদ হোসেন দিলীপ এর তত্ত্বাবধান করছেন। হলটির একাংশ দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন বিটিভির সাবেক ক্যামেরাম্যান গোলামুন্নবী। তার আত্মীয়রা সেখানে অবস্থান করছেন।

শহীদ শাহাবুদ্দিন হল: তাঁতীবাজার ৮২, ঝুলনবাড়ী লেনের হলটি দুই যুগেরও বেশি সময় পুলিশের দখলে ছিল। ২০০৯ সালের জুনে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক এর দখল নেন।

কর্মচারী আবাস: তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসস্থল ২৬, পাটুয়াটুলীর কর্মচারী আবাসে ছয়তলা বিশিষ্ট ক্রাউন মার্কেট তৈরি হয়েছে। জনৈক ওবায়দুল্লাহ এর মালিকানা দাবি করছেন বলে জানা যায়।

(Visited ১৮ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ
বন্যার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন দুই প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ
হচ্ছে না জেএসসি-জেডিসি!
সকল স্তরে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধের নির্দেশ রাষ্ট্রপতি
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪১ হাজার ৮৬২
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান রাষ্ট্রপতির