ভয়ঙ্কর প্রতারক কাজী শাহেদের ন্যায় মিজানুর রহমান মিজান নামের আরেক প্রতারকের আবির্ভাব ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। সাধারন মানুষকে মামলা মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে উভয়পক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া নিজেকে বিশেষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে জাহির করে সরকারী,বেসরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধ জগতের মানুষদের কাছ থেকে মোটা অংকের বখড়া আদায় করাই তার একমাত্র পেশা।
সরকারী খাস জলাশয়ের ঠিকাদার ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে অসংখ্য মানুষের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াও তার অবৈধ উপার্জনের আরেকটি অবলম্বন। সবচেয়ে বড় যে অপরাধটি তার দ্বারা হয়ে থাকে তা হলো দেশের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন বিচারকের নাম ভাঙ্গিয়ে ফরিয়াদী মানুষজনের নিকট থেকে অর্থ আদায় করা। এসব অপরাধ কর্মকান্ড করার সিড়ি হিসেবে নিজেকে সে দৈনিক জনতা পত্রিকার সাংবাদিক ও ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র ও সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের বর্ননায় জানা যায় প্রতারক এ মিজানুর রহমান মিজান অশিক্ষিত একজন ব্যক্তি। চেহারা সুরতে সুন্দর, সুঠোম দেহের অধিকারী ও কথা বার্তায় পটু। নিজেকে আবার হাজী পরিচয় দিয়েও থাকেন। কয়েক বছর আগে সে পার্বতীপুরের একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। ৫ম শ্রেনী পাশ এই মিজানুর রহমান গত কয়েক বছর আগে এস,এস,সি/এইচ,এস,সি ও বিএ, এম,এ পাশের জাল সনদ বানিয়ে ওইসব জাল সনদের ফটোকপি জমা দিয়ে দৈনিক জনতার প্রতিনিধি কার্ড নিয়ে বনে যান জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক।
পার্বতীপুরের করিম মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে খুলে বসেন কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ও ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনের কার্যালয়। এখান থেকে সে কম্পিউটারে জাল সনদ তৈরি ও বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিকগন বলেন, জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকা অফিসসমুহে ক্রাইম বিটে কর্মরতদের নিয়ে ঢাকায় ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। যার যৌক্তির ভিত্তি আছে। কিন্তু প্রতারক মিজানুর রহমান মিজান উপজেলার পর্যায়ের মত একটি ছোট জায়গায় অপারাধী চক্রের কাছ থেকে অবৈধ ফায়দা আদায় করার কুট কৌশল হিসেবেই খুলে বসেছেন অনিবন্ধিত এই সংগঠনটি।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত বা স্থানীয় পর্যায়ের পত্রিকাগুলো কোন ব্যক্তিকে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেননা বা কাউকে দেয়নি। উক্ত মিজানুর রহমান মিজানকেও দেয়া হয়নি। উক্ত মিজানুর রহমানের জাল সনদে সাংবাদিকতা করার বিষয়ে দৈনিক জনতা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও অজ্ঞাত কারনে তারা এখনও এই প্রতারককে বহাল রেখেছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকগন অনিবন্ধিত ও অনুমোদনবিহীন সাংবাদিক এসোসিয়েশনের কার্যালয়টি বন্ধ করার পাশাপাশি তার জাল সনদ তৈরি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত্ম আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃ্িষ্ট আকর্ষন করেছেন।
প্রতারক মিজানুর রহমান প্রতারনার মাধ্যমে পরকীয়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে একজন সেনা সদস্যের স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন। পরে সরকারী চাকুরীজিবী ওই মহিলার টাকা পয়সা ও জিনিস পত্রাদি আত্নসাত করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে রংপুরের বদরগঞ্জের এক রিক্সা চালকের স্ত্রীকে বিয়ে করে। বর্তমানে তাকে নিয়ে সে সংসার করছে।
এই প্রতারক গত কয়েক মাস আগে শহরের একজন কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ এর নিকট থেকে প্রতারনার মাধ্যমে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে ভূক্তভোগী ওই ব্যক্তি তার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান এর নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের বর্ননায় জানা যায়, উক্ত প্রতারক মিজানুর রহমান নিজেকে সরকারী জলমহালের ইজারাদার পরিচয় দিয়ে তাকে একটি সরকারী পুকুর মাছ চাষ করতে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এই টাকার বিনিময়ে আব্দুর রউফকে দেয়া হয় জনৈক মোকছেদ আলীর নামীয় পুকুর লীজের একটি কাগজ।
প্রতারক মিজানুর রহমান আব্দুর রউফকে বলেন, মোকছেদ আলীসহ অসংখ্য ব্যক্তিকে আমি সহকারী কমিশনার(ভূমি) এর নিকট থেকে পুকুর লীজ নিয়ে দিয়েছি। মূলত নেপথ্যে আমিই সেসব পুকুরের মালিক। আপনি পুকুর খননসহ মাছ চাষের কাজ শুরু করে দিন। আপনাকে কেউ বাধা না দিলেই হলো। তার কথামত আব্দুর রউফ পুকুর খননসহ পানি ভর্তি করার কাজে এক লাখ টাকা খরচ করে। কয়েকদিন পর একাধিক ব্যক্তি এসে তারাও পুকুরটি তাদের বলে দাবী করে বলে তাদেরকেও মিজানুর রহমান মিজানুর পুকুরটি লীজ দিয়েছে মাছ চাষ করার জন্য।
এ ঘটনায় তাদের সাথে ভূক্তভোগী আব্দুর রউফের ঝগড়া বিবাদ ও মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়। সেখানেও আব্দুর রউফের ৫০ হাজার টাকা অপচয় হয়। সর্ব সাকুল্যে আব্দুর রউফের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
উক্ত মিজানুর রহমান আব্দুর রউফকে হুমকী দিয়ে বলে যে, আমি ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি।
পাওনা টাকা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে সাংবাদিক বহর লাগিয়ে নিউজ করে বারোটা বাজিয়ে দিব।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে সে জানায়, আব্দুর রউফ নামের কাউকে আমি চিনিনা। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেয়ার কোন এখতিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানের নেই। বিচার করারও কোন এখতিয়ার নেই। এসব আমি কিছুই মনে করিনা।