সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে ফরিদা ইয়াসমিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ইলিয়াস খান বিজয়ী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের প্রার্থী ফরিদা ইয়াসমিন পেয়েছেন ৫৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল উদ্দিন সবুজ পেয়েছেন ৩৯৫ ভোট।
জানা যায় ৬৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম নারী সভাপতি পেলেন জাতীয় প্রেসক্লাব। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরুর পর ৬৬ বছরের ইতিহাসে এর আগে কখনও কোনো নারী সভাপতি হননি।
ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা। এছাড়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ফোরাম অ্যাগেনিস্ট ট্রাফিকিংয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মিডিয়াতে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করায় ২০১৭ সালের ৭ মে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টটেটিভ থেকে বিশেষ কংগ্রেশনার রিকোগনিশন এবং নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিস থেকে পেয়েছেন ‘কংগ্রেসনাল স্পেশাল সার্টিফিকেট’।
ফরিদা ইয়াসমিন ১৯৬৩ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দৌলতকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম সাখাওয়াৎ হোসেন ভুঁইয়া এবং মায়ের নাম জাহানারা হোসেন। পাঁচ বোন এবং চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। শিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন ফরিদা ইয়াসমিন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগ থেকে ১৯৯০ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
ফরিদা ইয়াসমিন ১৯৮৯ সালে বাংলার বাণী পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতার চাকরি শুরু করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকাল থেকেই তিনি বিভিন্ন সাপ্তাহিক ম্যগাজিনে নিয়মিত কাজ করতেন। তিনি মুক্তকণ্ঠেও কাজ করেছেন।
১৯৯৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত। ২০০১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হন ফরিদা ইয়াসমিন। ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি সাউথ এশিয়ান ওমেনস মিডিয়া ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এবং এ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০১৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ফরিদা।
তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ভাষা আন্দোলন ও নারী (২০০৫), উজ্জ্বল নারীর মুখোমুখি (২০০৫) ও ইতিহাসের আয়নায় বঙ্গবন্ধু (২০১৭)। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পদক, উইমেন লিড দ্য নেশন পুরস্কার ও জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা লাভ করেন।
ফরিদা ইয়াসমিনের স্বামী বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। এ দম্পতির এক ছেলে মাহির আবরার এবং এক কন্যা নুজহাত পূর্ণতা।