২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

সাফল্যের দু’বছর!

সফলতা নিয়ে দুই বছর পূর্ণ করলো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জণ করে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বর্তমান সরকার শপথ গ্রহণ করে। আজ বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) পাঁচবছর মেয়াদি বর্তমান সরকারের দুইবছর পূর্ণ হলো।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ মেগা প্রকল্প হিসেবে পুরোপুরি দৃশ্যমান পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যাপক অগ্রগতি, কাচঁপুর দ্বিতীয় সেতু, মেঘনা দ্বিতীয় সেতু, মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু, ক্যাসিনো সম্রাজ্য নির্মূল, মাদকের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান,করোনা নিয়ন্ত্রনে কার্যকারী পদক্ষেপ, বৈশ্বিক মহামারীতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেললাইনের ব্যাপক অগ্রগতি, কর্ণফুলী টানেলের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করায় সরকারের দুইবছরে সফলতা ব্যাপক।পাশাপাশি কোভিড-১৯, লবণ সংকট, আম্ফান, বন্যা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন সহ বিভিন্ন ইস্যুতে গুজব ও সফলভাবে সংকট মোকাবিলা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত দুই বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য দেখলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কোভিড-১৯, আম্ফান, বন্যা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সফলভাবে সংকট মোকাবিলা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার মধ্যেও থেমে ছিল না দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠায় অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় গত এক বছরের ব্যবধানে ১৫৫ ডলার বেড়েছে। করোনা সংকটকালে বাজার পরিস্থিতিও ছিল সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ এতটাই শক্তিশালী দেশে রূপান্তরিত হয়েছে যার জন্য যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইবিআরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশের পেছনে পড়ে যাবে মালয়েশিয়া, নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশগুলো। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

করোনা সারাবিশ্বকে নাড়া দিলেও বড় দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশকে খুব বেশি দুর্বল করতে পারেনি। উল্টো এই করোনার মাঝেই নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থে সেতু তৈরির চূড়ান্ত ধাপ পার করে বিশ্বে ইতিবাচক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় করোনার থাবায় যেখানে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোও নিজেদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে আশার আলো দেখিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প।

করোনার সময়ে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও নতুন করে ক্রয়াদেশ আসা ও স্থগিতাদেশ হওয়া পোশাকের ক্রয়াদেশের পণ্য নিতে শুরু করেছেন বিদেশী ক্রেতারা। বিশ্বের নামীদামী ব্র্যান্ডগুলোও এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে পণ্য নিতে। এতে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ছে সরকার ও খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। করোনাকালীন খাতটিতে রক্ষার জন্য বিশেষ প্রণোদনাও কাজে এসেছে। কারখানা গুলোতে কর্মরত লাখো শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।

সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারির তালমাতাল পরিস্থিতিতেও দেশের পুঁজিবাজারে সূচক,লেনদেন, বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ২৮ ডিসেম্বর দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশের রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড হচ্ছে। এইতো কয়েক দিন আগে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

২০১৯-২০২০ সালে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। গত ১০ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ২২টি জেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে বিজয়ের মাসে এটি ছিল বাঙালি জাতির আরেকটি ঐতিহাসিক বিজয়। আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। দেশের প্রথম দ্বিতল এই সেতুর ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচতলায় চলবে ট্রেন। মাওয়া আর জাজিরাকে সংযুক্ত করবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে, হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। এর ফলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগর চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।

পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। সেই সম্ভাব্যতার ওপর ভিত্তি করে ২০০৭ সালে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় বিশ্বব্যাংক, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় হবে পদ্মা সেতু। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে বছরের সেপ্টম্বরে এক ঘটনায় উল্টে যায় পাশার দান। সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংকের দেখাদেখি বিদেশি ঋণদাতা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও অর্থ প্রদান স্থগিত করে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ অনেকের বিরুদ্ধে।

গত ২ বছরের সাফল্য স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর ছিলো নানা অর্জন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য  এওয়ার্ড মার্চ ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফরউইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। ‘ভ্যাকসিন হিরো’ –টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতা জন্য পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোট-৩৯ টি এওয়ার্ড অর্জন করেন।

 

(Visited ৩১ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

হযরত খাজাবাবা (রঃ) ও জামে আওলিয়া কেরামের পথ পূণরুদ্ধার সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদাতে কারবালা দিবসে ফেনীতে র‍্যালী
মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড সুন্নী মুভমেন্টের সমাবেশ
মহররম ঈমানী শোক ও ঈমানী শপথের মাস, আনন্দ উদযাপনের নয় – আল্লামা ইমাম হায়াত
করোনায় সারাদেশে আরও ৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৯৯৮
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
পেপসির সঙ্গে বিষ খাইয়ে খুন, যুবকের যাবজ্জীবন
চাল আমদানির সুযোগ পাচ্ছে ১২৫ প্রতিষ্ঠান