২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

একজন মানবিক মানুষের সত্যি গল্প

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুনা লায়লাকে ‘স্যার’ না বলে ‘আপা’ বলায় ইউএনও এর নির্দেশে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে আহত করেছে এমন অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।কিছু দিন আগে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রশাসন ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য অভিযোগ অনেক ইউএনওর বিরুদ্ধে। কিন্তু না গোবরের মধ্যেও যেমন পদ্ম ফুলের শোভা পাওয়া যায় ঠিক তেমনি ইউএনওদের এমন অভিযোগের ভিড়েও সন্ধ্যান মিলেছে এক মানবিক,সাদামনের, নিরহংকারী, সৎ ইউএনও শুল্কা সরকারের। যিনি সফলতার সাথে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় দ্বায়িত্বরত রয়েছেন। সারাদেশের বেশিভাগ ইউএনও যেখানে দুর্নীতি আর অর্থের চাদরে নিজেকে ঢেকে ফেলেছেন সেখানে একজন শুল্কা সরকার নিজেকে দিনরাত সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। কনরাড হিলটন বলেছেন, “সফল মানুষেরা কাজ করে যায়। তারা ভুল করে, ভুল শোধরায় – কিন্তু কখনও হাল ছাড়ে না” তারই প্রতিচ্ছবি যেন শুল্কা সরকার।

করোনার সময় থেকে তিনি নিজের জিবনের পরোয়া না করে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা ছিলো বাংলাদেশে বিরল।

মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’ কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজারিকার গানের এই কথাগুলো যে কত সত্যি তার একমাত্র উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ইউএনও শুল্কা সরকার । করোনা ক্রান্তিকালে যেখানে বাংলাদেশের অনেক ইউএনও এসি রুমে বসে আছেন সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজের মাধ্যমে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন শুল্কা সরকার।

মানুষের সেবা দিতে দিতে এক সময় তিনি নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেম। কিন্তু এর পরেও হাল ছাড়েনি। সুস্থ হয়ে আবার তিনি ফিরে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে।

ইউএনও শুল্কা সরকার দেশের করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই নিজের জীবনের পরোয়া না করে সাধারণ মানুষের কল্যাণে সর্বোত্র মাঠে থেকে কাজ করেছেন। করোনার শুরু থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লকডাউন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি কর্মকাণ্ড, সেনাবাহিনীর টহলে নেতৃত্বদান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ত্রাণ হতদরিদ্রদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়াসহ মাস্ক না পড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন শুক্লা সরকার। করোনা পরীক্ষা করার জন্য বন্দরে স্থাপন করেছেন করোনা টেস্ট বুথ। করোনার টিকা নিশ্চিত করতে এবং জনগণের কাছে টিকা সহজলভ্য করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।বর্তমান কঠোর লকডাউনে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপদ রাখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। ঘরবন্দী মানুষকে বাঁচাতে ভ্রাম্যমাণ, কাঁচাবাজার, ফলের বাজার, মাছের বাজারসহ ভ্রাম্যমান হাট নিয়ে গেছেন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের দোরগোড়ায়। ঘরবন্দী মানুষের জন্য ভ্রাম্যমাণ জরুরী ঔষধ সরবরাহ সহ চিকিৎসা সেবা চালু করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে অফিস করছেন সপ্তাহের সাত দিনই। মধ্য রাতেও ছুটে চলছেন জনগনের দরজায়। দীর্ঘ এই সময়ে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মাঠে ময়দানে কাজ করে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম করোনাযোদ্ধা বা করোনা হিরো হিসেবে প্রশংসায় ভূষিত হয় সর্বমহলে।শুধু তাই নয় গত বছর আগস্টে টং দোকান ও মূলধন দিয়ে ১০জন অসহায় ভিক্ষুককে পূর্ণবাসন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বন্দরের মানবতাবাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুক্লা সরকার।

একজন মানবিক মানুষ উল্লেখ করে আমি মেহজাবিন আক্তার আমার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছিকাম, আমি নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার স্যারের কথা বলছি। বন্দরে আমার শ্বশুরবাড়ি এবং কর্মস্থল হওয়ার সুবাদে স্যার কতটা দায়িত্বশীল ও সক্রিয় এটা জানতাম। চাকরিসূত্রে স্যারের সাথে পরিচয় ছিল। স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। তবে গতকালের পর থেকে এ শ্রদ্ধাবোধ হাজার গুন বেড়ে গেল।

গতকাল সকালে আমার শ্বশুর বাইক এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে ছিলেন। শুক্লা স্যার দায়িত্বরত কাজে ঐ স্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে আমার শ্বশুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে নিজে কথা বলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেখানে উপস্থিত আমার ননদকে সান্ত্বনা দিয়ে তারপর তিনি তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। অথচ তিনি জানতেনও না যে আহত ব্যক্তি আমার শ্বশুর। জানলে ভাবতাম হয়ত পরিচিত একজন মানুষকে তিনি উপকার করেছেন। তিনি একেবারে অপরিচিত একজন মানুষের জন্য নিজের আত্নীয় হলে যা করতেন ঠিক তাই করেছেন!!!

স্যারের মানবিকতা আর পরোপকারে আমি বিস্মিত! শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে স্যার ফোনে যোগাযোগ করে আমার শ্বশুরের শারিরীক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন। একজন মানুষ কতটা মহানুভব হলে এটা সম্ভব।

স্যারের কাছে সারা জীবন আমি ও আমার হাজবেন্ড কৃতজ্ঞ থাকবো। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন স্যারকে সুস্থ শরীরে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করেন।শুধু আমার শ্বশুরের উপকার করার জন্য এই প্রার্থনা করছি না। এই সাদামনের মানুষটা যতদিন বেচেঁ থাকবেন ততদিন আমার শ্বশুরের মত হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটা বইয়ে পড়েছিলাম, ভালো মানুষকে স্পর্শ করলেও নাকি পূন্য হয়। আজ শুক্লা সরকার স্যারকে একটু স্পর্শ করতে খুব ইচ্ছে করছে!! এভাবেই শুল্কা সরকারকে নিয়ে গর্ববোধ করেন বন্দরবাসী। বন্দরবাসী জানায় শুক্লা সরকারের মত এমন পরিশ্রমী,ত্যাগী, মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পেয়ে তারা অত্যন্ত খুশি।

(Visited ৬০ times, ১ visits today)

আরও পড়ুন

বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে এ জাতি কলঙ্কিত হয়েছে বিশ্ব দরবারে
বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোবা কান্না
গৌরব, আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাসের পদ্মা সেতু
দল ক্ষমতায় থেকেও কেন অসহায় যুবায়েররা?
মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব হোক বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণা
শপথ নিন সাংবাদিক নিপীড়কদের সাথে কোন আপোষ করবোনা
প্রাকৃতিক দুর্ভিক্ষ নয় রাজনৈতিক দুর্ভিক্ষই বিশ্বব্যাপী জীবন মানবতার মহা সংকট
পরিবার থেকেই ঘটছে শিশু সহিংসতা