গভীর রাতে এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও জেল-জরিমানার ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার এক আদেশে সুলতানা পারভীনকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
আলাদা আদেশে জনপ্রশাসনের উপ-সচিব মো. রেজাউল করিমকে কুড়িগ্রামের নতুন ডিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে এক আদেশে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন এবং সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কারের পর তিনি নিজের নামানুসারে ওই পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’ রাখতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মাদক রাখার অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রবিবার জামিনে মুক্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফুল অভিযোগ করেন, খোদ জেলা প্রশাসনের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার, রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। তিনি নিজ হাতে পেটান। আর এনকাউন্টার দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কলেমা পড়ে ফেল, আজ তোর জীবন শেষ।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। তবে আরিফুলের স্ত্রী দাবি করেন, পুরো ঘটনাই সাজানো।
এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার মধ্যে গতকাল সকালে জামিন পাওয়ার পর দুপুর ১২টায় কারাগার থেকে মুক্তি পান বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল। পরে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরিফুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ১২টার পরপরই হঠাৎ করে ঘরের দরজা ভেঙে তারা আমার ঘরে ঢোকে। ঢুকেই এখানে যিনি আরডিসি আছেন নাজিম উদ্দিন, তিনি আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। বাড়িতে ঢুকেই উনি আমাকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালিগালাজ করেন।
এরপর আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এ সময় আমি বারবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার দোষ কী, আমার অপরাধ কী? আমার কোনো অপরাধ থাকলে আমাকে বলেন, আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমার অপরাধটা কী বলেন? তারা আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। আর সে সময় তিনি (নাজিম উদ্দিন) বলতে থাকেন, ‘খুব বড় সাংবাদিক হয়ে গেছিস, তোর সাংবাদিকতা আমি ছোটাব, ডিসির বিরুদ্ধে লিখিস!’