রাজনীতির দৃশ্যমান মাঠে নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে আগামী দিনে দলের নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক রূপরেখায় নতুনত্ব আনতে যাবতীয় বুদ্ধি-পরাম’র্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
পাশাপাশি নিভৃতে বিএনপির নেতৃত্বে তার রাজনৈতিক উত্তরসূরির জন্য ‘মাঠ’ প্রস্তুতের কাজ করছেন। এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠনেতাদের কানে প্রাথমিক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন কৌশলে। বিএনপির উচ্চপর্যায় ও দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশে গত ২৫ মা’র্চ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে রাজধানীর গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজা’য় ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন খালেদা জিয়া। আগের মতো ব্যস্ততা নেই তার, নেই মধ্যরাত অবধি দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক।
তবে নিয়মিতভাবে দল ও দলের বর্তমান নেতৃত্বকে পরাম’র্শ দিচ্ছেন। করো’নাভাই’রাস, দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স’ম্পর্কে খবর রাখছেন নিয়মিত।
বিএনপির নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরসূরির জন্য ‘মাঠ’ প্রস্তুতের বিষয়ে গত দুই সপ্তাহে দলটির স্থায়ী কমিটি ও জ্যেষ্ঠ অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে
কথা হয়েছে। এসব আলাপে বেরিয়ে এসেছে খালেদা জিয়ার আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে পরিকল্পনা এবং বিএনপির নেতৃত্বে তার সন্তান তারেক রহমানের অবস্থান পাকাপোক্ত করার বিষয়গুলো।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। এক, বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং দলে তার অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া। দুই, পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তরসূরি তারেক রহমানের নেতৃত্বকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর লন্ডন থেকে ফিরে গ্রে’ফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের বর্তমান কমান্ডিং প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে সেটাই বহাল থাকবে। বর্তমান চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া আমৃ’ত্যু একই পদে থাকবেন। তবে কমান্ডিং ক্ষমতা পুরোটাই থাকবে বর্তমান ভা’রপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। তার নেতৃত্ব পর্যায়ক্রমে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে নানামুখী উদ্যোগ নেবেন দলের চেয়ারপারসন।
গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিএনপির একজন প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যানের মন্তব্য, ‘আপাতত যেভাবে দল পরিচালিত হচ্ছে, সেটাই থাকবে বলে দৃশ্যমান। ম্যাডাম এখন পেছন থেকে দলকে পরাম’র্শ দেবেন। নিজের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে তার ছে’লে তারেক রহমানের হাতেই থাকবে দল পরিচালনার ভা’র। তবে ভবিষ্যতে ভা’রপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদটিকে আরও সুসমন্বয় করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বা এ ধরনের কোনও পদ সৃষ্টি হতে পারে।’
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘গোটা উপমহাদেশের রাজনীতিতেই পরিবার প্রথার গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশে জিয়া ও শেখ পরিবারের বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উওঠার বাস্তবতা বহুলাংশে কম। সেক্ষেত্রে বেগম জিয়া যতদিন আছেন, একই পদে থাকবেন। দলের সক্রিয় নেতৃত্ব থাকবে তারেক রহমানের কাছে। এখানে অন্য কেউ গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর আগে ড. মুহাম্ম’দ ইউনূস রাজনীতিতে এসেছিলেন, কিন্তু বাস্তবতার কাছে গুরুত্ব পাননি। বেগম জিয়ার বয়স এখন পঁচাত্তর পার হচ্ছে, বিশ্বনেতৃত্বে এই বয়স কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।’