বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়ে চলেছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, আগের ধরনগুলোর মতো ওমিক্রনের কারণে মানুষ অনেক বেশি অসুস্থ হয় না। কিন্তু যেভাবে অনেক বেশি মানুষ এই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে অনেকে আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১২৮টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে। এছাড়াও বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত এই সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
ওমিক্রনসহ নানান বিষয় নিয়ে শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও ইনচার্জ,মিডিয়া বান্ধব ডা. আয়েশা আক্তার শিল্পীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ভালো অবস্থানে ছিলাম কিন্তু সারাবিশ্বের সাথে বাংলাদেশেও দ্রুত ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে এখন আক্রান্তের প্রায় ১৫% ওমিক্রন।
এবিষয়ে ওমিক্রন প্রতিরোধে তিনি জানান, আমাদের যে ভেরিয়েন্টেই আক্রমন করুক না কেন আমাদের প্রধান কাজ আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আমরা যদিও লক্ষ্য করছি ওমিক্রনে আক্রান্ত মৃত্যু কম কিন্তু কোন কিছুকেই হেলা করা যাবে না। এজন্য আমরা যদি মন্ত্রীপরিষদ থেকে ১১ দফা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আসা ১৫ দফা মেনে চলি তাহলে অনেকটাই সহজে ওমিক্রন মোকাবেলা করা সম্ভব। কারণ আমরা এখন মানুষদের সহজে ভ্যাকসিন দিতে পারছি। মানুষ প্রথমে অনাগ্রহ থাকলেও এখন ভ্যাকসিনের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। সকলেরই ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। কারণ ভ্যাকসিন দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মৃত্যুঝুকি যাদের থাকে তাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সকলে যদি ভ্যাকসিন দেয় আর তার সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অথ্যাত যে ভেরিয়েন্টাইনই আসুক না কেন স্বাস্থবিধি মেনে চললে যে কোন ভাইরাস আমাদের কাছে হার মানতে বাধ্য।
তিনি আরও বলেন, ডেল্টার সময় একটা ভয়াবহতা ছিলো। হাসপাতালে বেড খালি ছিলো না , হাহাকার ছিলো রোগীদের সেই অবস্থা যেন আমাদের আর না দেখতে হয়। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে আইসিইউ বেড, কোভিট বেড, অক্সিজেন যেগুলো দরকার সেগুলো কিন্তু আমরা বাড়াচ্ছি, তবুও আমরা চাই না মানুষের হাহাকার সৃষ্টি হোক। মানুষকে বুঝতে হবে যখন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে তখন কিন্তু সবার জন্য কষ্ট হয়ে যাবে। তাই নিজেদের ব্যক্তি চিন্তা করে মানুষকে উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ভ্যাকসিন দেওয়া, সরকারের কথা শুনা, নিজেদের জিবনটা রক্ষা করা, নিজেকে ভালোবাসা দেশকে ভালোবাসা।
রোগীদের চাপ আর সরকারি ব্যবস্থা কিভাবে সমন্বয় করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতবার ডেল্টার সময় যে ভয়াবহতা ছিলো সেই ভয়াবহতার মাঝেও আমরা সুন্দরভাবে রোগীদের সেবা করেছি। বেড ২৫০ ডেডিকেটেট ছিলো না সেটিকে ডেডিকেটেট করা হয়েছে। ২৫০ বেডের মধ্যে আমরা ১৮০ টি বেড কোভিড রোগীদের জন্য রেখেছি। বাকিগুলো রেখেছি সাধারণ বেড হিসেবে। সব কিছু মিলিয়ে ব্যবস্থাপনা ভালো রেখেছি। সরকারি সহযোগিতাও যথেষ্ট পাচ্ছি।
কোভিড রোগীদের সাথে সাধারণ রোগীর চাপ কিভাবে মোকাবেলা করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে কোভিড রোগীদের সাথে সাধারণ রোগীদের সেবা দেওয়া সব হাসপাতালের ডাক্তারদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সব সময় রোগীদের পাশে আছি। তবে তাদের অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।হাসপাতাল ঘুরে তার কথার প্রমান ও পাওয়া গেল,সুন্দর পরিস্কার,পরিচ্ছন্ন,পরিপাটি হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা।
টিকা কেন্দ্রে শতভাগ সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি বলেন, টিকা নিতে আসা সব বয়সীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সেবা দিচ্ছি। টিকা যেখানে দেওয়া হচ্ছে সেখানে অধিকাংশ সময় থাকছি। যারা আসছেন তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। টিকাদান কার্যক্রম সফল হচ্ছে এটাই আমাদের গর্বের জায়গা। ভালো ব্যবহার আর সহযোগিতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি বলেন, বুস্টার ডোজ দেওয়ার আগে যেন মেসেজ অনুযায়ী পেপার সঙ্গে আনা হয়। অনেকে মেসেজ অনুযায়ী পেপার সঙ্গে না নিয়েই কেন্দ্রে আসছেন। এতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে টিকা কেন্দ্রে আমরা শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে চাই।
উল্লেখ্য কোভিটের শুরু থেকেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত হাসিমুখে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে এই মানবিক ডাক্তার।